কনকনে শীত এখনও সেভাবে না পড়লেও ঠান্ডার আমেজ অনুভব করা যাচ্ছে অল্পস্বল্প সর্বত্রই। ইতিমধ্যেই নিউটাউনের ইকো পার্কের গেট নম্বর ১ এর ঠিক বাঁ পাশে হয়ে গেল রাজ্য হস্তশিল্প মেলা (২০২৩-২০২৪)। ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলল ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাজ্যের ক্ষুদ্র -ছোট ও মাঝারি শিল্পীদের উদ্যোগে এবং বস্ত্র দপ্তরের সহায়তায় মূলতঃ এই মেলার আয়োজন। প্রতিবারের মতো এবারও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার হস্ত শিল্পীরা হাজির হয়েছেন তাদের নিজস্ব সম্ভার নিয়ে। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার স্টল নিয়ে শুরু হয়েছে এই মেলা। ২৩ টি জেলার বিভিন্ন শিল্পীরা এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন যারা নিজেদের হাতে তৈরি জিনিস এখানে নায্য দামে বিক্রি করলেন। ৫০ টি প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়েছিল যার প্রতিটিতে ছিল প্রায় ৪০ টি করে স্টল। এছাড়াও ইকো পার্কের গেট নম্বর ১ এর খোলা মাঠেও ছিল আরও ৩৫০০ স্টল।
রংবেরংয়ের নানান শৌখিন জিনিস নজর কেড়েছে দর্শকদের। কোথাও বেতের বোনা ধামা, কুলো; আবার কোথাও ঘর সাজানোর বাহারি রঙের জিনিস নিমেষেই ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী চোখের সামনে তৈরী করে দিলেন শিল্পীরা। ইদানিং শহুরে শৌখিন ক্রেতার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী শিল্প সামগ্রীর ভোল পাল্টে গিয়েছে আমূল। সবকিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। কোথাও মিলেছে শোলার তৈরি স্পঞ্জের ফুল, বাঁশের তৈরি ফুলদানি, ল্যাম্প শেড, চেরা বাঁশের ইজি চেয়ার, বেতের সোফা সেট, ব্যাগ, পুতুল। নারকেল, সুপারি দিয়ে তৈরি ছোট ছোট শো-পিস, মাটির তৈরি পাত্র, মধুবনী ছবি আঁকা মাটির ও গালার তৈরি পাত্র, কাঠের তৈরি নানান শৌখিন জিনিস। কোথাও পাওয়া গিয়েছে টেরাকোটার জিনিস, কাঁচের তৈরি ছোট ছোট শৌখিন পুতুল ও শো-পিস। কোথাও নজর কেড়েছে বাংলার বিভিন্ন জেলার জনপ্রিয় সব শাড়ি – ধনেখালি, শান্তিপুরি, বালুচরী, কাঁথা স্টিচ ইত্যাদি। এ সমস্ত কিছু সঠিক দামের পরিবর্তে মানুষ আনন্দ সহকারে কিনছেন তাদের প্রিয় ঘরবাড়ির অন্দরমহল সাজানোর জন্য আবার প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য।
রাজ্য সরকার পরিচালিত ইকো পার্কের এই হস্তশিল্প মেলায় অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে থেকে বাছাই করে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির জাতীয় হস্তশিল্প মেলায়। শিল্পীরা এখানে বাংলার গৌরব তথা শিল্পকলাকে তুলে ধরেন এবং জাতীয় স্তরের স্বীকৃতি অর্জন করে থাকেন বাংলার বহু শিল্পী। কিছু কিছু শিল্পীর সাথে কথা বলে যা জানা গেল,লোকজন তাদের থেকে জিনিস কিনতে নয় দেখতে এসেছে। এমনকি তারা নাকি তাদের ঘাড়ের ওপর উঠে গিয়ে ছবি তোলায় মত্ত। শিল্পীদের তৈরী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আপনাদের সহায়তা ভীষণভাবেই প্রয়োজন। শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্যে বা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার জন্যে এই মেলায় অংশগ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়। মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে গেলে তাদের তৈরি শিল্পকে উপযুক্ত সম্মান আমাদেরই দিতে হবে।
Discussion about this post