কেবল লেখাপড়া নয়, একজন শিক্ষকের আরও কিছু বাড়তি দায়িত্ব থাকে। আসলে সমাজ পরিবর্তনের মূল কান্ডারী যে তাঁরাই। আজ এমনই এক শিক্ষিকার কথা জানব যাঁর নিজের জীবনই আস্ত একটা মেরুদন্ড সোজা রাখার পাঠ দেয়। শেখায় অধিকার বুঝে নেওয়ার হার না মানা লড়াইয়ের স্পর্ধা। বস্তারের প্রথম আদিবাসী শিক্ষিকা সোনি সোরি বারংবার রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরেও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি।
শোনা যায়, মাওবাদী সন্দেহে গ্রেফতার করে সোরির যোনিতে পাথর ঢুকিয়ে অত্যাচার করেছিল ছত্তিসগড়ের পুলিশ। ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয় সোনি সোরিকে। এরপর ছত্তিসগড়ের পুলিশ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তারপরেই দান্তেওয়াড়া এবং জগদলপুরের জেলে নারকীয় অত্যাচার চলে সোনি সোরির উপর। সোনির এক গোপন চিঠি থেকে জানা যায়, দান্তেওয়াড়ার পুলিস সুপার অঙ্কিত গর্গের নেতৃত্বে ৮ অক্টোবর মধ্যরাতে তাঁকে বিবস্ত্র করে দেওয়া হয় ইলেকট্রিক শক, চলে মারধর এবং যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পাথর। কী শিউরে উঠলেন তো? হ্যাঁ, শিউরে ওঠারই মতো। কিন্তু এতকিছুর পরেও টিভির পর্দায় সোরির মুখের উপর ঝাপসা আস্তরণ সেঁটে তাকে ধর্ষিতা হিসেবে থামিয়ে রাখা যায়নি, এখান থেকেই শুরু হয়েছে তাঁর নতুন লড়াই।
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সোনি ফেরেন এক যোদ্ধা হিসেবে। ভয় পাওয়ার বদলে আরও অকপট হন সোরি। নিজের গ্রামের আদিবাসী শিশুদের বর্তমান অবস্থার কথা সামনে এনে, সোনি জানান তারাও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন শিকার। জানান কীভাবে প্রতিনিয়ত গণতন্ত্র হরণ করা হয় বাস্তারের শিশুদের। একদিকে পুলিশের অত্যাচার, আধা সেনার নিপীড়ন অন্যদিকে মাওবাদীদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেহাদ, এই দুয়ের টানাপোড়েন শিশুদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে। এখন তাদের গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতেই লড়ে যাচ্ছে আদিবাসী শিক্ষিকা সোনি সোরি। তিনি লড়ছেন আদিবাসীদের জল জঙ্গল ও জমির অধিকার দাবিতে।
আজ শিক্ষক দিবস। হয়ত বর্তমানে এই শিক্ষক দিবসের মাতামাতিতে হারিয়েই যাবেন সোনি সোরি বা মেরুনা মূর্মূরা। তবুও আজীবন হকের দাবিতে সোচ্চার হবেন সোনিরা। শিক্ষার্থীদের মেরুদণ্ড সোজা রাখার পাঠ দিয়ে যাবেন জীবনভর।এই অভাগা দেশে সোনি সোরিদের মত শিক্ষকদের হাত ধরেই একদিন সত্যি কারোর জ্ঞানের আলো জ্বলে উঠবে এই বিশ্বাস নিয়েই আসুন শুরু করা যাক আজকের দিনটা।
কভার চিত্র – সোনি সোরির ফেসবুক প্রোফাইল থেকে প্রাপ্ত
Discussion about this post