বাংলায় এখন পবিত্র ঈদের মরশুম। একমাস ধরে কঠোর রমজান পালনের পর আসে এই উৎসবী মেজাজের দিন। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বছরের সেরা সময়গুলোর মধ্যে একটি হল এই ঈদ। কচিকাচা থেকে বয়স্করা নতুন পোশাকে সেজে বের হন নামাজ পাঠের উদ্দেশ্য। নাচগান খাওয়া দাওয়া আড্ডাতে ভরপুর একটা দিন বটে। চোখ মেললেই মসজিদগুলো ঝলমল করছে আনন্দের আতসবাজিতে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পা রাখলেই নানারকম আকৃতির সুন্দর শৌখিন মসজিদ তো আমরা দেখেই থাকি। কিন্তু আজ এমন এক মসজিদের কথা বলব যার আকার আকৃতি শুনলে কিছুটা অবাকই হবেন।
দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকার গড়চা রোড। এখানেই অবস্থিত কলকাতার ক্ষুদ্রতম মসজিদ গড়চা মসজিদ। একটি মাত্র গম্বুজ এবং পাঁচটি ছোট মিনারে ঘেরা এই মসজিদ। মসজিদের সামনের চাতাল করোগেটেড শিট দিয়ে ঢাকা। দেওয়ালের রঙ দেখে বোঝা যায় মসজিদটি বেশ পুরোনো আমলের। শোনা যায় এটির বয়সও প্রায় ৭০ বছরের কাছাকাছি। প্রথমে ঢুকলেই পড়ে একটি প্রার্থনা কক্ষ। পশ্চিম দিকের দেওয়ালে রয়েছে মেহেরাব – একটি কুলুঙ্গির মত জিনিস, যার কাজ কাবার দিক নির্দেশ করা। নামাজ পড়ার আগে হাত, পা এবং মুখ একটি বিশেষ পদ্ধতিতে জল দিয়ে ধুতে হয়। চাতালের বাইরেই রাখা সেই ছোট্ট জায়গা, যেটিকে ওজুখানা বলা হয়।
প্রার্থনা কক্ষের ভেতরে কার্পেট পাতা নামাজিদের জন্য।ইমামের জন্য অবশ্য আলাদা জায়গা, মেহেরাবের সামনে। মেহেরাবের পাশে মাইক, যেখান থেকে আজানের পবিত্র কথা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। বিদ্যুৎ আসার আগে মাইক ব্যবহার হত না। তখন এই মেহেরাবের তলায় বসেই কথা বলতেন ইমাম। মেহেরাবটি এমন বৈজ্ঞানিকভাবে তৈরি যে তা ইমামের গলার আওয়াজ প্রতিফলিত করে মসজিদের কোণে কোণে পৌঁছে দিত। যদিও এই মসজিদের আকার এতই ক্ষুদ্র যে ইমাম ফিসফিস কথাও সবার কানে পৌঁছবে। এখানে মেরেকেটে ওই ছয় জন বসতে পারে নামাজে। আর ছ’জনের বেশি হলে সে এক কষ্টকর ব্যাপার। কে কবে এই মসজিদটি তৈরী করেন সে তথ্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এই মসজিদের উপরও হামলা হয়। কিন্তু তা রক্ষা করেন তৎকালীন বাঙালি মুসলিমরাই।
বালিগঞ্জে মুসলিম সংখ্যা কম থেকেও ছটি মসজিদের অবস্থান। সত্যিই এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। তবে কি এই অঞ্চল পূর্বে মুসলিম অধ্যুষিত ছিল? এই ছোট্ট মসজিদের উত্থানই বা হল কিভাবে? এসব নিয়ে অনেকের মনে রয়েছে অনেক সংশয়। হয়ত এইসব প্রশ্নের উত্তর আবিষ্কার হবে একদিন। ততদিন নির্বিকারে বাংলার এক ঐতিহ্য হিসেবে গৌরবের সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে এই মসজিদগুলি।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – banglarmasjid.com, দীপাঞ্জন ঘোষ
Discussion about this post