কথায় আছে “কপালের নাম গোপাল!” প্রবাদটির রচয়িতা কে জানা নেই! তবে যেই বলুন মন্দ বলেন নি। আমাদের সবার প্রিয় ভাঁড়, গোপাল ভাঁড়ের সাথেও কপালের অদ্ভুত যোগ হয়। যদিও গোপাল ভাঁড়ের চরিত্রের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক ঐতিহাসিকদের মধ্যেই। কিন্তু শোনা যায় আমাদের প্রিয় ভাঁড়ের নাকি একবার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল! তবে সেটা পুরোটাই কি কপালের দায়? জানা যাক!
১৮৫৭ সালে সিরাজ-উদ-দৌলার সময়ে বাংলায় মসনদ নিয়ে লড়াই তুঙ্গে। বাংলার ওপর ইংরেজদের প্রথম থেকেই ছিল শকুনের চোখ। বাংলাকে বাগে পেতে সবার প্রথম দরকার বাংলায় বিক্ষোভের আগুন এ কথা তারা অচিরেই বুঝেছিল। বাংলার বাকি রাজাদের মগজ ধোলাই করে বোঝানো হয় নবাবকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলেই সিংহাসন তাদের। কিন্তু বাকিরা বোঝেননি এটা ইংরেজদের কত বড় ষড়যন্ত্র। একদিকে নবাব সিরাজ আরেকদিকে জগৎ শেঠ, মীরজাফর, নদিয়া রাজ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং আরও অনেকে। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার বিদূষক ছিলেন গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন। চতুর গোপাল ভাঁড় ইংরেজদের এই কু-বুদ্ধি সম্পর্ক আগেই অবগত হয়ে গিয়েছিলেন।
গোপাল নদিয়া রাজকে বারবার বাংলার ক্ষতি করার থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে বলেন। কিন্তু কোনও কথাতেই কোনও কাজ হয় না। উল্টে কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের কৌতূক করে বলেন সে যদি নবাবকে মুখ ভেঙিয়ে আসতে পারে তবে তিনি এই ব্যাপারে ভেবে দেখবেন। যথারীতি গোপাল ভাঁড় রওনা দিলেন মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু নবাবের দ্বারে এসেও দ্বাররক্ষীর কাছে জল না গলায়, তিনি দ্বাররক্ষীকে দিয়ে বসেন কামড়। গোপাল বুদ্ধিমান! দ্বার রক্ষী তাঁকে ধরে নিয়ে যায় নবাবের কাছে। নবাব সিরাজ অবাক হয়ে যান। গোপাল কিছু বলেন এবং পর মুহূর্তে নবাবকে ভেঙচি কাটেন। নবাব অত্যন্ত রেগে গিয়ে গোপালকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত হয় তাঁর বিচার হবে।
এই অবস্থায় একটু ফাঁক বুঝে গোপাল মীরজাফরকে বলেন, তিনি নবাবকে সব জানিয়ে দেবেন। সেই মুহূর্তে মীরজাফর নবাবকে দিয়ে গোপালের ফাঁসির আদেশ মঞ্জুর করান। কিন্তু হায় কপাল! এ তো যে সে ভাঁড় নয়, ইনি তো গোপাল ভাঁড়। এই অবস্থায় গোপাল আবার নবাবকে ভেঙচি কাটেন। সিরাজের মনে হয় এমন পাগল ব্যক্তিকে ফাঁসি দিয়ে কীই বা হবে? গোপাল ছাড়া পান। কৃষ্ণনগরে ফেরৎ এসে জানতে পারেন কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর পুরনো সিদ্ধান্তেই অনড় থাকছেন। গোপালও সিদ্ধান্ত নেন দেশ ছেড়ে দেওয়ার, তারপর তিনি ফেরত আসেন নি। কতটা কল্পনিক কতটা বাস্তব এই ঘটনা তা যাচাই করা অবশ্যই সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এটুকু বোঝা যায়, আমাদের প্রিয় গোপাল চতুর হওয়ার সাথে ছিলেন দেশপ্রেমিক!
Discussion about this post