আর কিছুদিন পরেই অমাবস্যার আর অমাবস্যা পূর্ণ তিথিতে শক্তিরূপিণী মা কালীর আরাধনার দিন। ইতিহাস প্রসিদ্ধ বিভিন্ন সাধন পীঠের গল্প আমাদের সবারই জানা। কিন্তু আজ বলব এমন এক কালীর গল্প যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস ও সে সময়কার ডাকাত রাজের রণক্ষেত্রের গল্প। সবাই জানেন যে ডাকাতদের প্রধান আরাধ্য দেবতা মা কালী। আর হুগলি জেলার সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুর এলাকায় অবস্থিত ডাকাত কালীকে জড়িয়ে রয়েছে অদ্ভুত ঘটনা। মা এখানে রক্তচক্ষু। আর দেবী মায়ের পুজোয় এখানে আজও মাকে প্রসাদ রূপে উৎসর্গ করা হয় চালভাজা ও কড়াই ভাজা।
অসুস্থ শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছিলেন মা সারদা। সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। হঠাৎ ডাকাতির উদ্দেশ্যে তার পথ আটকায় রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাতের দলবল। কিন্তু হঠাৎই এই দুই ডাকাত সর্দার মা সারদার চোখে রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায়। এ ঘটনায় রঘু আর গগন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সারদা মায়ের কাছে ক্ষমা চান রাত ও সেই রাতের মত মা সারদাকে থাকার ব্যবস্থাও করে দেন। আর সে রাতে মাকে চাল ভাজা, কড়াই ভাজা খেতে দেন।
পরবর্তীকালে সেই স্থানে তৈরি করা হয় মায়ের মন্দির। গগন ও রঘু ডাকাত মিলিতভাবে নির্মাণ করে মায়ের মূর্তি। মা এখানে রক্তচক্ষু। প্রাচীন প্রথা মেনে শূদ্রদের আনা গঙ্গা জল দিয়ে শুরু হয় পুজো। চার প্রহরে হয় চারবার পুজো ও ছাগ বলি। উচুঁ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই চালা মন্দির। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় গর্ভগৃহের কাঁঠাল কাঠের তৈরি দরজাটি। কারুশিল্পের সুন্দর নিদর্শন এই প্রাচীন দরজা।
এই কালী মায়ের ঐতিহ্য এতটাই উজ্জ্বল যে প্রতিবছর আজও মহা সমারোহে আরাধনা করা হয় মায়ের। কালী এতটাই জাগ্রত যে নিকটবর্তী তিনটি গ্রামে এই কালীমূর্তি ছাড়া আর অন্য কোন কালী মূর্তির পুজো হয় না। এমনকি গৃহস্থ ঘরেও শুধুমাত্র এই কালী মায়ের মূর্তি কিংবা ছবিই দেখা পাওয়া যায়। শুধুমাত্র কালীপুজোই নয়, সারা বছরই এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে লেগে থাকে মানুষের আনাগোনা।
চিত্র ঋণ – সৌরভ আদক
Discussion about this post