ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত শিশু আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের মতো বেড়ে ওঠে না ঠিকই, কিন্তু তারও একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ থাকতে পারে। কোনো অলীক কল্পনা, বা ঠুনকো সান্ত্বনা নয়। হাতে কলমে প্রমাণিত! যে ঘটনা বলতে যাচ্ছি তা বাস্তবিক রূপকথার সাক্ষী।
সদ্যজাত কন্যাসন্তান ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। ডাক্তারের মুখে কথাটি প্রথম শোনার পরই জন্মদাত্রী মা হাসপাতালে ছেড়ে যায় একরত্তি আলবাকে। তারপরের গল্পটা যেন খানিক রূপকথা! তখন আলবার বয়স মাত্র তেরো দিন। হাসপাতালে এলেও আলবাকে দত্তক নিতে মুখ ফিরিয়ে নেয় ২০ টি পরিবার। সেই সময়ে তার দিকে স্নেহের হাত বাড়িয়ে দেন ‘সিঙ্গল ফাদার’ লুকা ট্রাপানিজ। আলবাকে কোলে নিতেই লুকার মনে হয়েছিল, তাদের মাঝে এই বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেন জন্ম জমান্তরের! আলবার কাছে সুন্দর পৃথিবী উপহারের প্রতিজ্ঞাও সেইদিনের। ডাউন সিনড্রোম একটি জিনগত রোগ যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ক্রোমোজোমের অসঙ্গতির কারণে তাদের মানসিক আর শারীরিক বিকাশ কমে যায় সাধারণের তুলনায়। কিন্তু ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের চাইতে সামাজিক ক্ষেত্রে জটিলতার শিকার হতে হয় বেশি। আলবার রূপকথায় সে সবের কোনো আঁচ পড়তে দেননি লুকা। তিনি চেয়েছিলেন তার মেয়ের কাছে পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে উঠুক। হয়তো বাস্তব বিশ্বের চেয়েও সুন্দর।
২০১৭ সালের জুলাই মাস, লুকা দত্তক নেন আলবাকে। তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে একসঙ্গে থাকাকালীনই তাদের ইচ্ছে ছিল একটি কন্যাসন্তান দত্তক নেওয়ার, বাবা হওয়ার। পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সন্তানের স্বপ্ন তবুও অধরা থাকেনি। তবে দত্তক গ্রহণের ব্যাপারে ইতালির আইন যথেষ্ট কঠোর। সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনেই সিঙ্গল ফাদার হিসেবে লুকা শুরু করেন তার নতুন সফর। তবে প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে এককালে একটি চ্যারিটিও শুরু করেছিলেন। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যই ছিল তাঁদের। দীর্ঘদিন ধরে সেইসব মানুষদের কাছ থেকে দেখে বড় ভালোবেসে ফেলেছিলেন তাদের। এই জটিলতার দুনিয়ায় তাদের চেয়ে সরল আর কে আছে?
আলবাকে পেয়ে খুশি লুকার পরিবারের সকলে। আলবাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে তাদের নতুন সংসার। আলবার ঠাকুমা, বাবাকে নিয়ে তাদের ছোট্ট ভরাট সংসার। সুখী থাকুক তাদের সকলে। এভাবেই যেন ভালোবাসায় ভরে ওঠে পৃথিবীর সব গৃহকোণ। সকলেই যেন পায় একটি সুখী পরিবার!
Discussion about this post