‘ময়ূর’ পাখিটির সাথে তো আমরা সবাই পরিচিত। কার্ত্তিকের বাহন। আবার ভারতের ‘জাতীয় পাখি’র শিরোপা তার মাথায়। নীল রঙের কন্ঠ আর তার মনোহরী লেজ বাহার। একবার দেখলে, কোনওদিন ভোলার নয়। কিন্তু আজ, গল্প বলব ‘জলময়ূর’এর। ময়ূরের মত সুদীর্ঘ লেজ আর জলে পদ্মপাতায় বাস। নাম হয় তাই জলময়ূর। কিন্তু এদের একটি বিশেষ চরিত্রের কথা অনেকেরই অজানা। তা হল, এরা ‘সিঙ্গেল ফাদার’ -এর প্রজাতি। বুঝলেন না তো ব্যাপারটা? চলুন বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাক।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন সময়। পুরুষ জলময়ূরের রূপ এইসময় হয়ে ওঠে আরও গাঢ় ও সুন্দর। জলময়ূরীরা তাতে সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। অনেক সময় একটি পুরুষকে নিয়ে, ঝগড়া চলে দুই জলময়ূরীর। জয়ী জলময়ূরী মিলিত হয় পুরুষ জলময়ূরটির সাথে। ঘর বাঁধে জলজ লতাগুল্মের উপর। শুরু হয় পদ্মপাতায় সংসার। সপ্তাহখানেক পর ডিম পাড়ে স্ত্রী। আর তারপরেই ডিম আর তার পুরুষটিকে ফেলে পালায় সে। এমনকি অন্য কোথাও অন্য পুরুষ জলময়ূরও খুঁজে নেয় সে। এই ঋতুতে প্রায় ৭-৮ বার ঘর বাঁধে জলময়ূরী। প্রতিবার ২ থেকে ৪ টি ডিম দেয় সে।
অন্যদিকে পুরুষ জলময়ূরটি তার ডিম আগলে বসে। ২৩ থেকে ২৬ দিন ধরে তা দেয়। ডিম ফুটলে বাচ্চাদের খাবার জোগায়। অন্য পাখিদের থেকে রক্ষা করে। একরকম পিতৃস্নেহে লালন করে চলে দুই মাস। ঠিক ‘সিঙ্গেল ফাদার’-এর মতো। তাই এদের বংশগতিতে পুরুষ প্রজাতির গুরুত্ব অনেক বেশি। যদিও স্ত্রী একজায়গায় থাকলে, বছরে এতো ছানা দেওয়া সম্ভব হতো না। এই প্রজাতির স্ত্রীর একটিও দায়িত্ব বংশবৃদ্ধি। এই পাখি মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার, বাংলাদেশেই মূলতঃ দেখা মেলে। লেজসহ আকৃতি প্রায় ৩৯-৫৮ সেমি। মিঠা জলের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। তবে দিন দিন এর সংখ্যা বিলুপ্তির পথে। তাই জলময়ূরের সংরক্ষণের কথা উঠছে চারিদিকে।
Discussion about this post