১৯৭১ দক্ষিণ কলকাতার পদ্মশ্রী সিনেমা হলের পাশে একটি চায়ের দোকানে জড়ো হলেন সঙ্গীত শিল্পী অংশুমান রায়, গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, দীনেন্দ্র চৌধুরী ও আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের প্রযোজক উপেন তরফদার। উদ্দেশ্য আড্ডা দেওয়া ও স্পুল টেপ রেকর্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি শোনা। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে সেই ঐতিহাসিক ভাষণ শুনছিলেন ও আবেগান্বিত হয়ে পড়ছিলেন। ঠিক তখনই গৌরী বাবু তার চারমিনার সিগারেটের প্যাকেটের ভেতরের সাদা অংশে একটি গান লিখে ফেললেন। লেখাটি তিনি দীনেন চৌধুরী ও অংশুমান রায়কে দেখতে দিলেন।লেখাটি পড়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন তারা। অংশুমান রায় গৌরীপ্রসন্নের কাছে দাবি করলেন যে, তিনিই এই গানটির সুর দেবেন ও গাইবেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অংশুমান গানের সুর তৈরি করে ফেললেন। স্পুল টেপ রেকর্ডারেই সেই গান তুলে নেন উপেন তরফদার। অংশুমান রায়ের কণ্ঠ আর শক্ত গানের খাতার ওপরে টোকা দিয়ে তাল দিলেন দীনেন চৌধুরী। এই দুই মিলে তৈরি হলো ইতিহাস।
শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি/ প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি/ বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। “শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি/ প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি/ বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।” ১৫ এপ্রিল আকাশবাণীর বিখ্যাত অনুষ্ঠান ‘সংবাদ পরিক্রমা’য় বাজানো হয় ঘরোয়াভাবে রেকর্ডকৃত ও গাওয়া সেই গান, একটানা নয়, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাঝে মাঝে। ওই দিন আকাশবাণীতে রাতেও বেশ কয়েকবার ভাষণ ও গানের এই যুগলবন্দি প্রচার করা হয়েছিল। পরের দিন সেই চায়ের দোকানে অংশুমান রায়কে জড়িয়ে ধরেছিল সবাই এবং উপেন বাবুকে আকাশবাণীর কলকাতার অধিকর্তাসহ সবাই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত কণ্ঠ ও অংশুমান রায়ের এই গান “শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ।”
বারবার বাংলাদেশের সব মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপনা জুগিয়েছে। অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই গানটি। আর তাই এক সপ্তাহ পরেই ২২ এপ্রিল হিন্দুস্তান রেকর্ড অংশুমানের কণ্ঠে এই গানটির ৪৫ আরপিএমের একটি রেকর্ড বের করে। রেকর্ডটির এক পিঠে ‘শোনো একটি মুজিবরের কণ্ঠে’ ও অন্য পিঠে গানটির ইংরেজি রূপান্তর- ‘এ মিলিয়ন মুজিবরস’ সিঙ্গিং প্রকাশ করা হলো। ইংরেজি রূপান্তর গৌরীপ্রসন্ন নিজেই লিখেছিলেন এবং গেয়েছিলেন অংশুমান রায় ও করবী নাথ।
Discussion about this post