চৈত্র সেল! চৈত্র সেল! চৈত্র সেল! একদিকে চৈত্র সেলের মরশুমে বাজারে বাঙালির রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা। পাশাপাশি নববর্ষ বরণে উদগ্রীব বাঙালির বর্ষশেষে এবার, সর্বশেষ উৎসব ‘গাজন’ এর অপেক্ষা। লোক মতে এই গাজনের দিন আসলে হর-কালীর বিবাহ অনুষ্ঠান। এবং গাজনের সন্ন্যাসীরা হলেন বিয়ের বরযাত্রী। বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে গাজনকে ঘিরে নানারকম লৌকিক আচার বিচার। স্থান বিশেষে নামও পরিবর্তিত। যেমন মালদায় এরই আরেক রূপ গম্ভীরা আবার জলপাইগুড়িতে গমীরা। তবে গাজনের প্রসঙ্গ উঠলে হাওড়ার বানীবন গ্রামের গাজন উৎসবের কথা বলতেই হয়। এখানে গাজন পালিত হয় পীরের দরগায়! হ্যাঁ, একশো শতাংশ সত্যি।
বানীবন গ্রামের পীর আব্বাস উদ্দিন শাহের কবরস্থান যাকে গ্রামের মানুষ জঙ্গল বিলাস আবাসের কবর নামেই চেনে। আর এখানেই তাঁর দরগা যার গড়ন আবার খানিকটা মন্দিরের মতো। এই দরগার প্রবেশপথও দক্ষিণমুখী, পূর্বমুখী নয়। এখানে গাজনের নির্দিষ্ট রীতিনীতি ও আছে। গাজনের দিন এই দরগায় হাজির হয় পার্শ্ববর্তী বৃন্দাবনপুর, জগৎপুর গ্রামের লোকজনও। গাজন উৎসব শুরু হয় দরগার আশেপাশের স্থায়ী ব্যবসায়ী-দোকানদের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে। ঢাক ও কাঁসা বাজিয়ে চলতে থাকে দরগা পরিক্রমা। তারপর পীরের পুজো। এবং এগুলো সবই সত্যি! দুটি ভিন্ন ধর্ম এখানে মিলিয়ে গিয়েছে নিজেদের মতো করে। কেউ এখানে চোখ রাঙাতে আসেনি। বরং আপন করে নিয়েছে সকলে। পীরের পুজোর পর চলতে থাকে অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান। গাজনের মূল দুই সন্ন্যাসীর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে পশ্চিমদিকে মুখ করে দাঁড়ায় গাজনের দুটি দল। এরপর তাঁদের সামনে এক বিশেষ ছড়া পাঠ করতে থাকেন বৃন্দাবনপুর গ্রামের ভুঁইয়া পরিবারের কোনো এক সদস্য। এই বিশেষ ছড়া পাঠকে এনারা ‘দ্বারমুখ’ বলেন। এরপর সন্ন্যাস ধর্মের সমস্ত নিয়ম নীতি মেনে করা হয় শিব পুজোও।
বেশ চমকপ্রদ তাই না? ধর্মকে নিয়ে যখন একদল মানুষ কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতেই ব্যস্ত, তখন এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা যেন টাটকা অক্সিজেন! এই জন্যই বলে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।”
তথ্য ঋণ – জেলা সংস্কৃতি পরিচয় গ্রন্থ ‘হাওড়া’
Discussion about this post