হুগলি জেলার ঐতিহ্যশালী দেব-দেবীদের আরাধনার কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম কোন্নগরের শকুন্তলা কালী মন্দির। বহুকাল আগে এই মন্দির চত্বরে একটি বিশাল গাছ ছিল। ওই গাছে প্রচুর শকুন এসে বসত, সেই থেকেই এই মন্দিরের নাম হয়ে যায় শকুন্তলা কালীবাড়ি। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয় বা তৃতীয় শনিবার এই পুজোর আয়োজন করা হয়। প্রায় ১৩৫ বছরের প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে মন্দির চত্বরে। রাতভর চলে ভক্তদের গঙ্গা স্নানের পর দন্ডী কাটা ও জল ঢালার পালা। এক দিনের সারা রাতের পুজোর মধ্যে দিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে মানুষজন।
এই মন্দিরের গঠনশৈলী একদম সাদামাটা। নাট মন্দিরটি বিরাট বড়। তার মাঝখানে একটি হাঁড়িকাঠ। মূল মন্দিরের গর্ভ গৃহে রয়েছে একটি শ্বেত পাথরের বেদি। এখানেই নিত্যদিনের পুজো-অর্চনা চলে। শকুন্তলা কালী আসলে রক্ষাকালী পুজো। কথিত আছে দেবী সূর্যের মুখ দেখেন না। তাই সূর্যাস্তের পর দেবীর মূর্তি তৈরি শুরু হয়। সন্ধ্যার মধ্যে মূর্তি তৈরি শেষ করে পুজো শুরু হয়। সারা রাত পুজো চলার পর সূর্যোদয়ের আগে প্রতিমার নিরঞ্জন হয়।
শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো আগে ডাকাতরাই করত। মায়ের কাছে বলি দিয়েই ডাকাতি করতে যেত ডাকাতের দল। তবে এই পুজোর শুরু কিভাবে তা সম্বন্ধে একটি কাহিনি জানা যায়, বহুকাল আগে বাঞ্চারাম মিত্র লেনের চক্রবর্তী বাড়ির দেবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পৌরহিত্যের কাজ সেরে ফিরছিলেন। সেই সময় তিনি এলোকেশী শ্যামলা এক অপরূপা নারী মূর্তি দেখতে পান। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা উধাও হয়ে যায়। সেই রাতেই ওই ব্রাহ্মণ স্বপ্নে মায়ের নির্দেশ পান। এরপরই স্বপ্নে দেখা রূপের আদলে মূর্তি গড়ে শকুন্তলা মায়ের পুজো শুরু করা হয়।
স্থানীয় বিশ্বাস, মা কখনোই তাঁর সন্তানদের ফেরান না ভক্তরা মানত করলে তা পূরণ করেন মা শকুন্তলা। অনেক ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়ায় মায়ের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। তাই এই পুজোর আগের দিন থেকেই অগণিত মানুষ ভিড় করেন বেদিতে জল ঢালার জন্য। এই মন্দিরে পশুবলির রীতিও রয়েছে প্রথম থেকেই। একসময় কয়েক হাজার হাজার ছাগল বলি দেওয়া হত। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে সংখ্যা কমেছে অনেকটাই। বলি শেষে শুরু হয় যোজ্ঞ আহুতি। এরপর সূর্য ওঠার আগেই মাকে বিসর্জন দেওয়া হয় গঙ্গায়।
Discussion about this post