১৮৫৭, ১০ মে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীনতার খিদে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল সিপাহী বিদ্রোহ নামে। ফ্রেডারিক এঙ্গেলস এবং কার্ল মার্কস সিপাহী বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দেন।কিন্তু অন্যান্য ঐতিহাসিকরা এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বলাই বাহুল্য ভারতীয় ডাকটিকিটে সিপাহী বিদ্রোহের প্রভাব ছিল অভাবনীয়। ঠিক যেভাবে সময়ের দলিলে ধরে রাখতে হয় জীবাশ্মের ছাপ, সেভাবেই ভারতীয় ডাকবিভাগ ধরে রেখেছে সিপাহী বিদ্রোহের ছাপ। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম সিপাহী বিদ্রোহে যেসব রাজা-রানী ও সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে স্মারক ডাকটিকিট ছাপিয়ে ভারতীয় ডাকবিভাগ এক নজিরবিহীন ইতিহাস গড়েছে।
সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা ১০ মে, ১৮৫৭ সালে মিরাটের সেনা ব্যারাকের বিদ্রোহকে ধরা হলেও, এর প্রথম সূত্রপাত কিন্তু বাংলার বহরমপুর ও ব্যারাকপুরের সেনাছাউনিতেই। ১৮৫৭, মার্চ মাস, নতুন এনফিল্ড রাইফেলের টোটা ব্যবহার করতে নাকচ করায় শাস্তি পেতে হয় বহরমপুরের সিপাহীদের। একই কারণে সিপাহী মঙ্গল পান্ডে ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গুলি করতে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। ১৮৫৭, ৮ এপ্রিল ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফাঁসি দেওয়া হয় সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ মঙ্গল পান্ডেকে। বিদ্রোহের যে আগুন তিনি জ্বালিয়েছিলেন, সেই আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতের মিরাট, দিল্লি, এলাহাবাদ, কানপুর, লক্ষ্ণৌ, ঝাঁসি সহ বিভিন্ন স্থানে।
ভারতীয় ডাকটিকিটে সিপাহী বিদ্রোহ নিয়ে যে গভীর আবেগ জমে ছিল, তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে স্বাধীনতার দশম বর্ষপূর্তি ও একই সাথে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের শতবার্ষিকী উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে। এদিন ভারতীয় ডাকবিভাগ ১৫ নয়া পয়সা ও ৯০ নয়া পয়সা দামের দুটি বহুবর্ণ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। যার একটিতে ছিল তরবারি হস্তে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ ও অন্যটিতে ছিল একটি বেদীতে বট গাছের চারা ও তাকে আবেষ্টিত জ্যোতির্বলয়। এরপর ১৯৭৫ সালে ‘বাহাদুর শাহ জাফর’ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ কেও সন্মান জানিয়েছে ভারতীয় ডাকবিভাগ। অনেকেরই অজানা বাহাদুর শাহ ছিলেন উর্দু সাহিত্যের বিখ্যাত কবি, তাঁরই ছদ্মনাম ‘জাফর’।
সিপাহী বিদ্রোহে তাঁতিয়া টোপি ছিলেন অন্যতম চরিত্র। অন্যদিকে বিখ্যাত নানাসাহেব ও বেগম হজরত মহলের ভূমিকাও ছিল অনস্বীকার্য। ভারতীয় ডাকবিভাগ সকল যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৮৪, ১০ মে, চারটি বহুবর্ণ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ১৯৮৮-এর ৯ মে, ৬০ পয়সা দামের আরও একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে ডাকবিভাগ। অঙ্কনের দায়িত্বে ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। ছবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই মহিলা নেত্রী-ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ এবং লক্ষ্ণৌয়ের বেগম হজরত মহলকে দেখান হয়েছে। নিঃসন্দেহে ছবিটি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় সংহতির প্রতীক। ডাকবিভাগ শ্রদ্ধা জানিয়েছে অন্যান্য শহীদেরও। ১৯৮৭, ১০ ডিসেম্বর কামানের সাথে বাঁধা বীর নারায়ণ সিং স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়।
তথ্যসূত্র: ডাকটিকিটের বিচিত্র গল্প – শোভেন সান্যাল
Discussion about this post