উনিশ শতকের প্রথম দিকে ভারত সরকার কলকাতা থেকে বিহারের চুনার পর্যন্ত সিমাফোর পদ্ধতিতে খবর পাঠাবার জন্য প্রতি আট মাইল অন্তর একশো ফুট উঁচু ইটের স্তম্ভ নির্মাণ করেন। টেলিগ্রাফ উদ্ভব হবার পূর্বে সংকেত মারফৎ এটাই ছিল বার্তা পাঠানোর একমাত্র পদ্ধতি। পুরনো মানচিত্রে এই গুলো টেলিগ্রাফ স্টেশন হিসাবে দেখানো হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ হতে শুরু করে উত্তর পশ্চিম দিকে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া জেলা এবং বিহারের কিছু অংশে এইরকম কয়েকটি স্তম্ভ নির্মিত হবার পর তারবার্তা প্রেরণের আধুনিক উপায়টি আবিষ্কার হলে এই প্রকল্প পরিত্যক্ত হয়। ইটের তৈরি গোল বেড়ের চারতলা ও ওপরের দিকে ক্রমশ সরু এই স্তম্ভগুলি সব এখন জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভিতরের ফাঁপা অংশে সিঁড়ি দিয়ে কাঠের মেঝে যুক্ত প্রতি তলায় উঠতে হতো। পরবর্তী কালে পরিত্যক্ত স্তম্ভগুলি জরিপের কাজে ব্যবহার হয়। এই কৌতূহলোদ্দীপক স্মৃতিচিহ্নগুলিকে একধরনের পুরাকীর্তি বলা যায়।
হাওড়ার আন্দুল বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিট পনেরো হাঁটাপথে খটির বাজার। পাশে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা সরস্বতী নদী । দক্ষিণ তীরে জীর্ণ এক ইটের গম্বুজ— স্থানীয় মানুষের কাছে সিমাফোম টাওয়ার। হাওড়ার ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি গ্রাম। বর্ধিষ্ণু এই গ্রামের ইতিউতি এখন আধুনিক জীবনের ছোঁয়া। আবাসন থেকে শপিং মল সবই রয়েছে এখানে। কিন্তু গ্রামেরই খটির বাজার এলাকায় এলে চোখ আটকাবে একটি লম্বা মিনারে। যার শরীরের ইটের পাঁজর সবুজ হয়ে গিয়েছে শ্যাওলা আর আগাছাতে। এলাকায় মানুষের কাছে মিনারটি পরিচিত ‘গির্জা’ বলে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁর শাসনকাল থেকেই প্রায়ই হত বর্গী হানা। প্রজাদের সতর্ক করতে নবাব আট মাইল অন্তর একশো ফুট উঁচু ইটের গম্বুজ তৈরি করান। এখান থেকেই বর্গী আক্রমণের সংকেত যেত প্রজাদের কাছে।তারই নিদর্শন খটির বাজারের এই টাওয়ার। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক- এর সময়ে দ্রুত বার্তা পাঠানোর জন্য সিমোস্ফোনিং সিগন্যালের ব্যবহার হয়। চারটি পতাকার মাধ্যমে রিলে পদ্ধতিতে খবর দেওয়া হত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পরীক্ষামূলক ভাবে সিমোস্ফিয়ার টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু হয়। ১৮৫২ সালে বৈদ্যুতিন টেলিগ্রাফ চালু হলে খটির বাজারের এই সিমোস্ফিয়ার টাওয়ার অচল হয়ে যায়। তবে জরাজীর্ণতাকে সাথে নিয়েও আজও ইতিহাস বহন করছে এই টাওয়ার।
Discussion about this post