পুজো পাব্বনের দিনগুলো থেকেই মেলে বাঙালির ভালো থাকার রসদ। মনের গ্যালারি থেকে সমস্ত অন্ধকার মুছে ফেলে দিয়ে, সবাই দীপাবলিতে মেতে ওঠে আলোর মিছিলে। কখনো শ্যামা পোকা এসে বার্তা দেয় মা কালীর আগমনের। আবার কখনো আলোয় আলোয় মেলে মায়ের আগমনের খবর। আজ ভূত চতুর্দশী। রাত পোহালেই মা কালীর পুজো। ভূত চতুর্দশীর দিনটিতে নিয়ম আছে চোদ্দ শাক খাওয়ার। আর তার সাথে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর। এই নিয়ম মানলেই নাকি ভূত বাবাজি আর ঘেঁষবে না আশে পাশে।
ভূত চতুর্দশীতে ‘ভূত’ তাড়ানোর এই প্রস্তুতি কিন্তু আগে থেকেই শুরু করেছে পটুয়াপাড়া। শিল্পীরা দুগ্গা পুজোর সময় থেকেই বিক্রি শুরু করেছেন মাটির প্রদীপের। আজ্ঞে হ্যাঁ। তিলোত্তমার পটুয়া পাড়ায় শিল্পীরা প্রতিমার পাশাপাশি সমানভাবে বিক্রি করছেন মাটির প্রদীপ। প্রতিবারের মতো এই বছরও বহু মানুষ মাটির প্রদীপ কিনছেন। তবে এগুলো তৈরি হয় পটুয়াপাড়ার গলিতে। নানান রঙের প্রদীপ তৈরি করেছেন তারা। আর দাম শুরু হচ্ছে দু টাকা থেকে।
নিত্যনতুন আবিষ্কারের দিনে যদিও এখন বাজারে অনেক কিছু পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের তৈরি প্রদীপ বিক্রি হচ্ছে অনেকদিন। আবার এই বছর জল দিলে জ্বলে উঠছে প্রদীপ। অনেক বাঙালি আকর্ষণে পড়ে ভুলেছে মাটির প্রদীপের আবেগ। তবে উত্তর কলকাতার পুরনো কিছু বাড়ি ঘুরে দেখলে দেখা যাবে তাদের মাটির প্রদীপের প্রতি ভালো লাগা। তারা রীতি নীতি ভোলেনি আজও। এই সুন্দর সুন্দর নিয়মেই তারা নিজেদের জড়িয়ে রাখতে ভালোবাসেন। সকালে ভাতের পাতে চোদ্দ শাক মুখে দিয়ে, বিকেল হলেই শুরু হয় ভূত বিদায়ের পালা। মাটির প্রদীপে দেওয়া হয় তেল আর সলতে। তারপর বাড়ির উঠোনে দক্ষিণ দিকে মুখ করে জ্বালানো হয় প্রদীপ। মাটির প্রদীপ দেওয়া হয় মন্দিরের দালানে দালানে। এ রীতি পালনের তালিকায় নাম আছে বহু বাঙালির। ভূত চতুর্দশীর এই শুভক্ষণে শুধু উঠোনে নয়, প্রদীপ জ্বলে উঠুক বাঙালির মনে মনে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – সুমিত লাল চৌধুরী
Discussion about this post