আবিষ্কারকের কোনো বয়স হয় না। এই কথা সত্য প্রমাণ করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চন্দননগরের এক এক হতদরিদ্র ভ্যান চালকের সন্তান সৌভিক শেঠ। তার অসাধারণ যুগান্তকারী আবিষ্কারটি হল স্মার্ট শু। নবম শ্রেণীর পড়ুয়া থেকে তাই আজ তার আরেক পরিচয় বালক বিজ্ঞানী। অবাক করার মতোই এই আবিষ্কার। এই জুতো পড়ে হাঁটলেই পায়ের চাপে উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ। আর সেই বিদ্যুতেই চার্জ হবে মোবাইল ফোন, পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানা যন্ত্রপাতি। এখানেই শেষ নয়, জুতোয় রয়েছে জিপিএস এবং গোপন ক্যামেরার মত ‘স্মার্ট’ উপাদানগুলিও। তাই ইতিমধ্যে বিদেশেও ডাক পেয়েছে চন্দননগরের এই খুদে বালক।
বালক বিজ্ঞানী সৌভিক এখন কানাইলাল বিদ্যামন্দিরের নবম শ্রেণির প্রথম স্থানাধিকারী ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক নানা জিনিস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা তার কাছে নেশার মত। এই নেশার ওপর ভর করেই এর আগে ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে সে বানিয়েছিল কলিং বেল। বর্জ্য পদার্থ জ্বালিয়ে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, সে নিয়ে একটি ডেমো প্রজেক্টও করে সে। তবে এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে তার স্মার্ট শু আবিষ্কার। সৌভিক জানিয়েছে, এই জুতো পড়ে এক কিলোমিটার হাঁটলেই ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হয়ে যাবে৷ আর সেখান থেকে চার্জ দেওয়া সব মোবাইল, পাওয়ার ব্যাঙ্কের মত মেশিনগুলো।
খুব গরিব পরিবারের ছেলে হলেও একবুক স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করছে সৌভিক। পঞ্চম শ্রেণি থেকেই বিজ্ঞান নিয়ে নাড়া ঘাটা করতে তার উৎসাহের অন্ত ছিল না। বাড়ির আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় স্কুলের শিক্ষক এবং প্রতিবেশী এক দাদার কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে আসছে সে। ভবিষ্যতে তার ইচ্ছে আইটিআইতে পড়াশোনা করার। তবে তার সব স্বপ্নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থের যোগান। বাবা স্বরূপ শেঠ, একজন জুটমিল শ্রমিক ছিলেন৷ তবে ভাগ্যের পরিহাসে সেই কারখানাও গিয়েছে বন্ধ হয়ে। তাই এখন ভ্যান চালিয়েই পরিবারের মুখে ভাত যোগাচ্ছেন তিনি। তাই যদি কোনো কোম্পানি বা জুতো সংস্থা তার এই আবিষ্কারের পাশে এসে দাঁড়ায়, তবেই সে এই স্মার্ট শু তৈরির খরচ জোগাড় করতে পারবে। ইতিমধ্যে জাপানের এক নামজাদা গবেষণা কেন্দ্র থেকে ডাক পেয়েছে সে। এত কম বয়সে তার এই সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়।
তথ্য ও চিত্র ঋণ – প্রদীপ প্রসাদ রায়
Discussion about this post