আমাদের শৈশবের প্রতিটি ধাপই কোথাও একটা গিয়ে মিশে গিয়েছে আমাদের স্কুলের সঙ্গে। আর সেই স্কুল জীবনেরই একটা অমূল্য স্মৃতি হলো রোল কলের খাতা। প্রতিদিন সকালে শিক্ষক ও শিক্ষিকার কন্ঠে ধ্বনিত হতো আমাদের নাম, আর সঙ্গে সঙ্গেই আমরা হাত তুলে উত্তর দিতাম, “প্রেজেন্ট!”। এই রোল কলের খাতা শুধুমাত্র একটা সাধারণ খাতা নয়, এ ছিল আমাদের পরিচয়ের স্বাক্ষর। সকাল বেলা ক্লাসরুমে ঢুকে প্রথমেই যে জিনিসটার জন্য সবাই অপেক্ষা করত সেটা হলো রোলকল। নিজের নাম শুনে উত্তর দেওয়ার মধ্যেই কোথাও একটা লুকিয়ে ছিল এক বিশেষ উত্তেজনা। কখনো শিক্ষক আমাদের নামের উচ্চারণ একটু ভুল করতেন, আর তাতেই হেসে উঠতাম সবাই। স্কুলজীবনে এই খাতাটা খুবই সাধারণ একটা জিনিস হলেও, এখন এই খাতার গুরুত্ব সবাই কোথাও না কোথাও একটা অনুভব করি।
এই রোল কলের খাতার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে আমাদের স্কুল জীবনের নানা মধুর স্মৃতি। ক্লাসে কারো অনুপস্থিতি টের পেলে বন্ধুদের মধ্যে ফিসফিস করে কারণ নিয়ে হতো আলোচনা; আবার কেউ কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে না আসার সাহস দেখালে, সেটা হতো এক ধরনের নীরব বীরত্ব। এই রোল কল ছিল একটা সময়ে আমাদের দিনের সূচনা। ক্লাসের প্রথম কাজ, একটা প্রথা, যে প্রথা আমাদের স্কুল জীবনের প্রতিটা দিনকে একটা নির্দিষ্ট ছন্দে বেঁধে রাখত। হয়তো সেই সময় স্কুলে না যেতে পারলেই আমাদের বেশি আনন্দ হতো। তবে এখন, জীবনের কাজের চাপের মাঝে যখন আমরা শৈশবকে ফিরে দেখি, তখন সেই ‘প্রেজেন্ট’ শব্দটাই মনের ভেতর একটা আলাদা শূন্যতা তৈরি করে।
এই রোল কলের খাতা ছিল আমাদের শৈশবের সাক্ষী। সেই খাতা যেন একটা মায়াবী রেজিস্টার, যেখানে কেবলমাত্র নাম নয়, লেখা থাকত আমাদের হাসি-বন্ধুত্ব, শিক্ষক-শিক্ষিকার বকুনি, আর নিষ্পাপ দিনের সেই স্মৃতিগুলো। প্রতিটি পৃষ্ঠায়, প্রতিটি কলামে আমরা রেখে যেতাম আমাদের শৈশবের অমূল্য মুহূর্তগুলো। কখনো ক্লাসে উপস্থিত থাকার জন্য রোল কলের খাতায় নাম দেখে আমরা যে আনন্দ পেতাম, সেটা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সেই খাতার পাতা যেন আমাদের মনের গভীরে একটা অক্ষয় স্মৃতি হিসেবে থেকে গিয়েছে। স্কুল জীবনের সেই অমূল্য দিনের ছাপ আজকের কর্মব্যস্ত জীবনে একটা সুগন্ধি বাতাসের মতো এসে আমাদের স্মৃতিকে সতেজ করে দেয়। আর বুঝিয়ে দেয়, কতটা বড় হয়ে গেলাম আমরা!







































Discussion about this post