সাহিত্য ও সমাজতাত্ত্বিক গবেষক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক নরওয়ের সম্মানজনক হলবার্গ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আর্টস ও হিউম্যানিটিজের ‘নোবেল’ বলে পরিচিত এই পুরস্কার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তুলনামূলক সাহিত্য, সাবঅলটার্ন স্টাডিজ, নারীবাদ, রাজনৈতিক ও সামাজিক তত্ত্ব নিয়ে তাঁর অগ্রণী গবেষণার স্বীকৃতি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট ফর কমপ্যারেটিভ লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্পিভাকের কাজ বিশ্বজুড়ে অন্তত ২০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নরওয়ের বেরজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ৫ জুন এক অনুষ্ঠানে যুবরাজ হাকোনের হাত থেকে তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
গায়ত্রী স্পিভাক পশ্চিমী দর্শন ও সাহিত্যতত্ত্বের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাঁক দেরিদার ডিকনস্ট্রাকশন তত্ত্বকে ইংরেজিভাষী বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছেন। পোস্ট-কলোনিয়াল(Post Colonial) স্টাডিজের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত প্রবন্ধ “Can the Subaltern Speak?” প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর ও পশ্চিমা গবেষণার সীমাবদ্ধতাকে সামনে নিয়ে আসে। তাঁর অন্যান্য কাজগুলি হল “Critique of Postcolonial Reason” (১৯৯৯), “Death of a Discipline” (২০০৩), এবং “An Aesthetic Education in the Era of Globalisation” (২০১২)। তাঁর “প্ল্যানেটারিটি” ধারণাটি বিশ্বায়নের নৈতিক বিকল্প হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
ভারতের নিম্নবর্গ ও প্রান্তিক নারীদের শিক্ষার জন্য কাজ করেছেন গায়ত্রী স্পিভাক। বহু স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গের রাজনগর ও পুরুলিয়ার মতো প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁর উদ্যোগে শিক্ষার আলো পৌঁছেছে। হলবার্গ কমিটি তাঁর কাজের প্রশংসা করে বলেছে, ‘সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তিনি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ও প্রান্তকে একসূত্রে বেঁধেছেন।’ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আধুনিক জ্ঞানচর্চার প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পদ্মভূষণ ও কিয়োটো পুরস্কারজয়ী এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সাফল্যে বাঙালি শিক্ষাবিদরাও গর্বিত।
Discussion about this post