তাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ ক্লাস ফাইভ কি সিক্স। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে নিয়ে প্রথম পড়া তাঁর সৃষ্টি, তাঁর লেখা। প্রথম কোনও গোয়েন্দার সঙ্গে আলাপও সেইসময়। তারপর থেকে পরপর, একের পর এক তাঁর লেখা বই পড়ার শুরু। গোয়েন্দা কাহিনী থেকে শুরু করে কল্পবিজ্ঞানই হোক বা সাধারণ জীবনের ছোট গল্প। গল্পের চরিত্ররা একে একে নিজেরই চারপাশের মানুষ হয়ে উঠেছেন তখন! ফেলুদা যেন নিজেরই জ্যাঠতুতো দাদা, আমিই যেন তোপসে। প্রফেসর শঙ্কু যেন পাশের বাড়ির বিজ্ঞানের জ্যাঠামশাই। তারিণী খুড়ো যেন পাড়ার সেই গল্প দাদু, যার গল্পে একবার ডুব দিলে ওঠা খুব মুশকিল! এছাড়াও টিপু, মুকুল, রুকু, পল্টু, চটপটি এরা তো যেন আমারই সমবয়সী। যেন আমার খুব কাছের কোনও বন্ধু। গল্পের জগৎ ছেড়ে তারপর ডুব দিলাম তাঁর সিনেমার জগতে। কিসব মণি-মাণিক্য ছড়ানো তাতে। আহা! চোখ যেন জুড়িয়ে গেল। পথের পাঁচালী থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে, অন্যদিকে ফেলুদা বা গুপীবাঘা। যতই দেখছি ততই যেন মুগ্ধ হচ্ছি। অবাকও হচ্ছি ঠিক ততটাই!
সেইসময় থেকে ধীরে ধীরে এবার ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে চেনার বা জানার পর্ব শুরু। আবারও ঠিক একই রকম মুগ্ধ হওয়ার পালা। একজন মানুষের একই অঙ্গে এত রূপ। কিভাবে সম্ভব? ঠিক কিভাবে! সে প্রশ্নের উত্তর আজও পাইনি। উত্তর খোঁজার চেষ্টা যদিও চালিয়ে যাইনি আর। বুঝেছি কিছু কিছু মানুষ হয়ত এরকমই হন। তাঁদের বোঝা আমাদের মত সাধারণ মানুষের কর্ম্ম নয়! তিনি গুরুদেব, হ্যাঁ আমার কাছেই। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে নিজের খেয়ালেই। এই ‘মহানগর’-এ ‘ঘরে-বাইরে’র ‘পথের পাঁচালী’ শেষ করে, নিশ্চিন্দিপুরের রূপকথার ‘দিনরাত্রি’ পেরিয়ে এসে, ‘অপরাজিত’ সেই ‘নায়ক’ আজ ও অ’প্রতিদ্বন্দ্বী’। যিনি না থাকলে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র জগতের বহু মণি-মাণিক্য আমাদের হাতছাড়া হয়ে যেত!
আজ তাঁর জন্ম-শতবর্ষ। চোখের সামনে তিনি না থাকলেও, হৃদয় আর মস্তিষ্কে তিনি সমসময়ই বিরাজ করে যান। শিল্পীদের শুধু জন্ম হয়, মৃত্যু হয় না। এখন তাই অন্য এক দেশে অন্য রূপকথা লিখতে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। জন্মদিনের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই তাঁকে। শুভ জন্মদিন, সত্যজিৎ বাবু। ভালো থাকবেন।
Discussion about this post