হোক সাদা-কালো! তবুও বাইক চালকরত নায়ক ও পিছনের সীটে বসা নায়িকার ঠোঁটে “তবে কেমন হত তুমি বল তো।” বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনাগুলির একটি হয়ে জ্বলজ্বল করবে আজীবন। এতটুকু পড়েই বলে দেওয়া যায় কথা হচ্ছে ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সপ্তপদীর। নায়িকার ভূমিকায় সুচিত্রা সেন ও নায়ক উত্তম কুমার দুজনেই তখন জনপ্রিয়তার শিখরে। পরপর আসছে তাঁদের অভিনীত হিট ছবি, সেই সঙ্গে অভিনয় দক্ষতা, পর্দায় রসায়ন, সংলাপ প্রতিবার আরও গভীরে গিয়ে ছুঁয়ে আসছে সিনেমাপ্রেমী ও বাঙালির মন।
তাঁদের এই আকাশচুম্বী সাফল্যয় এমত অবস্থায় আঘাত হানা শুরু হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইন্ডাস্ট্রিরই একদল অসাধু লোক রটনা প্রচার করে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উদ্যত হয়। বিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে খোদ মহানায়িকার কাছে লোক পাঠানো হয় সপ্তপদীতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত বদলের জন্য। বলা হয়, এই ছবিতে নায়কের চরিত্রের আকর্ষণীয়তার সামনে ঢাকা পরবে নায়িকার চরিত্র। গল্পে এক ব্রাহ্মণ নায়কের পাশে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী রিনা ব্রাউনকে কিছুতেই গ্রহণ করবে না বাঙালি দর্শক। পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছায় যে সিনেমার সাথে যুক্ত কলাকুশলীরা ভেবেই নেয় এ ছবির বৈতরণী পার হবে না।
বলা বাহুল্য, এসব কোনো কিছুতেই দমানো যায়নি সুচিত্রা সেনকে। বরাবরই দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী মহানায়িকা। তাঁর চরিত্র নির্বাচন, সেটে পেশাদারিত্বের গল্প সর্বজন বিদিত। কোনো বাধায় হার মানতে না শেখা রমা ওরফে সুচিত্রা সেন সেদিনও তুড়ি মেরে সমস্ত গুজব উড়িয়ে, জল্পনায় জল ঢেলে চুটিয়ে শেষ করেছিলেন পরিচালক অজয় করের ‘সপ্তপদী’র কাজ। বাকিটা আজ ইতিহাস। সারা বাংলায় বিপুলভাবে সাড়া ফেলেছিল কৃষ্ণেন্দু ও রিনা ব্রাউনের ভালোবাসার গল্প। তাঁদের পর্দার সম্পর্কের আশাহত পরিণামে আজও মন কেমন করে ওঠে বাঙালীর।
রিনা ব্রাউনের ডেসডিমনা নি:সন্দেহে মহানায়িকার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয়গুলির একটি। সেদিন ছবির সেটে তাঁর নাছোড়বান্দা জেদ ছিল বলেই আমরা চাক্ষুষ করতে পেরেছি রিনা ও ডেসডিমনাদের, উপহার পেয়েছি কালজয়ী সপ্তপদী।
Discussion about this post