শান্তিপুরের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল আদতে শ্রী শ্রী অদ্বৈতাচার্য্যর সেবিত বিগ্রহ। আজ থেকে প্রায় আনুমানিক ৫৭৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৪৩৪ সালে শ্রীহট্টের লাউর গ্রামে শ্রী শ্রী অদ্বৈতাচার্য্য জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কুবের মিশ্র এবং মা লাভা দেবী। ছোটবেলা থেকেই অদ্বৈতাচার্য্য লেখাপড়া এবং ধর্মীয় চেতনায় বিশেষ মনোযোগী ছিলেন। ১২বছর বয়সে তিনি স্মৃতিশাস্ত্র ও ন্যায়শাস্ত্র পড়াশুনার জন্য শান্তিপুরে আসেন। খুব অল্প সময়েই তিনি স্মৃতি, ন্যায় এবং বেদ সম্পন্ন করে ‘বেদ পঞ্চানন’ উপাধি পান। মা-বাবার মৃত্যুর পর তিনি ভারত পরিক্রমায় বের হন। উল্লেখ্য তিনি সারা ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেছিলেন এবং সেই পরিক্রমা শেষ করতে তাঁর প্রায় পঁচিশ বছর সময় লেগেছিল।
বৃন্দাবনে এক বট গাছের তলায় থাকাকালীন একদিন গভীর রাতে মদনমোহনের স্বপ্নাদিষ্ট হন। মদনমোহন রাখাল রূপ ধরে অদ্বৈত প্রভুর কাছে এসেছিলেন। পরদিন সকালে এই কথা তিনি সকলকে জানান এবং এক বৈষ্ণব ব্রাহ্মণকে সেবার জন্য আহ্বান করেন। এরপর অদ্বৈতাচার্য্য গোবর্ধন পরিক্রমা করে এসে দেখেন মদনমোহন মন্দিরে নেই। অনেক অনুসন্ধান করেও তিনি বিগ্রহের খোঁজ পেলেন না। তারপর তিনি স্বপ্ন দেখেন মদনমোহন তাঁকে বলছেন, অভক্তের অত্যাচারে তিনি ফুলের তলায় লুকিয়ে আছেন। তখন মথুরার চৌবে ব্রাহ্মণ এসে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে আবার মদনমোহনকে আবার নিজস্থানে প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দির বহুবার সংস্কার হলেও প্রথম তৈরী হয় আনুমানিক ৪৩৫ বছর আগে। অদ্বৈতাচার্য্য নিজেই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি এরপর শান্তিপুরে নিজের বাড়িতে ফিরে এলেন এবং চিত্রপটের সঙ্গে গণ্ডকী থেকে শাল গ্রামশিলা সবই নিয়ে এলেন। কিছুকাল পরে অদ্বৈতাচার্য্যের গুরুদেব মাধবেন্দ্র পুরীপাদ শান্তিপুরে চলে আসেন। মাধবেন্দ্র পুরীপাদ ছিলেন সাক্ষাৎ চলমান জগন্নাথ। অদ্বৈতপ্রভুকে তিনি বললেন গোপী রূপে সেবা করতে। অদ্বৈতপ্রভুর বয়স যখন ১০০ বছর তখন মহাপ্রভু পরলোকগমন করলেন। অদ্বৈতপ্রভু ১২৫ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত মদন গোপালে বিলীন হন তিনি। শ্রী অদ্বৈতাচার্য্যের ছয় পুত্র ছিল। জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রী অচ্যুতানন্দ বিবাহ করেন নি তাই তাঁর দ্বিতীয় পুত্র শ্রী কৃষ্ণ মিশ্রকে শ্রী শ্রী রাধামদনগোপালের সেবার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি। শ্রী কৃষ্ণ মিশ্রের বংশধরদের থেকেই শ্রী রাধামদনগোপাল বাড়ির সৃষ্টি হয়। আজও শ্রী শ্রী রাধামদনগোপাল জীউ বাড়িতে শ্রী কৃষ্ণ মিশ্রের বংশধরগণ প্রতিদিন অন্নভোগ দেন। শ্রী অদ্বৈতাচার্য্যের সেবিত বিগ্রহ আজও তাঁর স্মৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – কৌলাল
Discussion about this post