বাংলার ঘরে ঘরে গুছিয়ে রাখা আছে কী জানি কত ঐতিহ্য। আলিশে বালিশে মালিশে সবকিছুতেই গ্রাম বাংলার মা ঠাকুমাদের যত্নের ছোঁয়া লেগে। কোথাও হাতে বোনা মাদুর, কোথাও হাতে তৈরি পাখা, আবার কোথাও নকশা আঁকা কাঁথা। এই সবকিছুই বাংলার বহু পুরনো ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে চলেছে। তবে পুরনো জিনিসের মধ্য নতুনেরর নিজস্বতা এখন একটা আলাদা মাত্রা নিয়ে আসে ইদানিং। তেমনি পুরনো দিনের নকশি কাঁথা আজকে নতুন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এনেছে সেই কাঁথা সেলাইয়ের উত্তরীয়তে।
পুরনো ঐতিহ্যের সাথে নতুন চিন্তা ভাবনা মিশিয়ে আজকাল তৈরি হচ্ছে কত ‘ফিউশন’। এমনই এক ফিউশন বা মিশ্রণ হলো এই কাঁথা সেলাইয়ের উত্তরীয়। শীতে সয়েটার, চাদর, মাফলার জড়িয়ে ঠিক মনে মতো যেন স্টাইল করা যায় না! নতুন ভাবনার এই উত্তরীয় গায়ে উঠলেই মানুষের শীতের দিনে স্টাইল করতে না পারার দুঃখ অবশ্যই মিটবে। এই বাংলার নকশা করা কাঁথার ইতিহাস প্রায় দুই হাজার বছর ধরে জীবিত। তা একেবারেই জি আই স্বীকৃতি প্রাপ্ত। শান্তিনিকেতনের মহিলারা এই কাঁথা স্টিচেই দিয়েছে নতুনের ছোঁয়া। কিন্তু এই উত্তরীয় নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে শান্তিনিকেতন যাওয়া বেশ কঠিন! তাতে অবশ্য কিছু যায় আসবে না। কারণ শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত দোকান ‘আমার কুটির’-এর এই সমস্ত সামগ্রীই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
বাড়িতে বসেই শান্তিনিকেতনের হাতের কাজ পৌঁছে দিচ্ছে ‘দ্য বেঙ্গল স্টোর’ নামক অনলাইন বিপণি। কিন্তু এই উত্তরীয় যে শুধুই শরীরের বাইরের দিকের শোভা বাড়ানোর জন্যই তা নয়! শোভা বাড়ানোর সাথে সাথে শীতের দিনে এই উত্তরীয় উষ্ণতাও দেবে যথেষ্ট। আগে কোনও স্থানের জনপ্রিয় হাতের কাজ চাইলে সেই স্থানে যেতেই হত প্রথমে। কিন্তু ‘আমার কুটির’ এবং ‘দ্য বেঙ্গল স্টোরের’ সহযোগিতায় তা বাড়িতেই এখন পাওয়ার সুযোগ হচ্ছে। এই ‘আমার কুটির’ আজকের বিপণি নয়। এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী সুষেন মুখার্জী ১৯২৩ সালে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অনেক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে এখন তার নাম লোক মুখে সব স্থানে ছড়িয়ে।
পরবর্তীকালে ১৯৭৮ নাগাদ ‘আমার কুটির’ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় পরিণত হয় বিপ্লবী পান্নালাল দাশগুপ্তের হাত ধরে। তৈরি হয় “আমার কুটির সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট।” হাতের কাজ কত মানুষের দু’বেলা খাওয়ার জোগাড় করার একটি বড়ো মাধ্যম। কিন্তু গ্রামের মানুষেরা শহরে না আসা অবধি সেই হাতের কাজের সঠিক দাম পান না। সবার পক্ষে শহরে আসাও সম্ভব নয়। তাই এটি একটি অভিনব উদ্যোগ। শুধু যে বাড়িতে চাইলেই অনলাইনে পাওয়া যাবে তার জন্য নয় বরং হাতের কাজের সঠিক মূল্য দেওয়ার জন্য। শুধু দামী ব্র্যান্ডেড জিনিস কেন বাংলার মা ঠাকুমাদের হাতের কাজও অনলাইনে এভাবে ছড়িয়ে পড়ুক সারা দেশে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – বঙ্গদর্শন
Discussion about this post