উত্তরাখণ্ডের একটি অতি পরিচিত জায়গা হল দেরাদুন। যার নাম শুনলেই অনুভব হয় শান্ত প্রকৃতির টান। সেখানেই বইছে সং নদীর ফল্গুধারা। রংবাহারী নুড়ি কাঁকর ছড়িয়ে ছিটিয়ে নদীতট জুড়ে। আর তারমধ্যে দুষ্প্রাপ্য বিশেষ হলদে নুড়ির অস্তিত্ব। প্রকৃতি নিজেই যেন নিজেকে সাজিয়ে তুলেছিল অন্য মাত্রায়। নদীটির গন্তব্য সমুদ্রে মেশে না। এই বিশেষত্বই তো বারংবার টেনে আনে পর্যটকদের।
কিন্তু এখানের বর্তমান চিত্রটি কেমন জানেন? পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমী সঙ্ঘমিত্রা বনবিবি তাঁর একটি বিশেষ ভিডিও পাঠিয়েছেন। যেখানে সং নদীতটে খালি পায়ে হেঁটে চলেছেন তিনি সুর ধরে। ভিডিওটিতে পরিষ্কার দেখা যায়, নদী তার আগের স্রোত হারিয়েছে। নদীটির নুড়িপাথর যে হারে সরানো হচ্ছে, কমছে নদীর পিএইচ মাত্রা। নুড়ি সরে নদীর ফল্গুধারা ভূগর্ভে বিলীন হওয়ারও আশঙ্কা প্রবল। প্লাস্টিক বোতল, পলিথিনে ভরে উঠছে নদীগর্ভ ও নদীতট। প্রকৃতির সাজসজ্জার নুড়িগুলো কুড়িয়ে, সেজে উঠছে ড্রয়িংরুম। ছোট ছোট রকমারি মাছেই ভরছে মানুষের শৌখিনতার ছাপ অ্যাকোরিয়াম। হাজার পরিযায়ী পাখির ডেরা ছিল এই অঞ্চল। কিন্তু সোনালী হাঁস, সাদা শকুন, নীলকন্ঠ পাখি কোথায় গেল তারা? মানুষের সচেতনতা এখন বিলুপ্তির পথে। তাই এরাও আজ লুপ্তপ্রায়। পাখি মেরে চলছে কিছু পর্যটকের ফূর্তির আসর। তারউপর পর্যটকদের সেলফির উৎপাতে, উপেক্ষিত পুলিশি সাইনবোর্ড। তাই এসবে দোসর হয়েছে দুর্ঘটনা। চলছে জলে ট্যুরিস্টদের টয়লেট ও আবর্জনা ফেলার ধুম। অথচ এই নোনাজলই ছিল বন্যপ্রাণীর একমাত্র পানীয়। কিন্তু চওড়া চড়া পড়ায়, তাতেও হস্তক্ষেপ পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানীয় জলেরও তীব্র সংকটে অঞ্চল। পর্যটকদের তান্ডবে, অযোগ্য হয়ে পড়ছে ক্রমশঃ এই বাসভূমিটি।
প্রয়োজন নদী সংরক্ষনের, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের। সরকারের বিশেষ দৃষ্টির প্রয়োজন হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি। অনুরোধ আসছে হাজার বার পর্যটকদের উদ্দেশ্যে। নিষেধাজ্ঞা না মানা, দন্ডনীয় অপরাধ বলে জানানো হচ্ছে। প্রকৃতি সংরক্ষণের দাবিতে সোচ্চার আজ প্রকৃতিপ্রেমী সঙ্ঘমিত্রা বনবিবি। বারবার উঠে আসছে একটাই আওয়াজ, “save song river of uttarakhand”.
Discussion about this post