আজকাল বেড়াতে যাওয়ার বিষয়টিও মানুষ অনেকরকম ভাবে উপলব্ধি করতে চায়। ভ্রমণ পিপাসু মন অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। তেমনই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ট্রেকিং’ বিষয়টি। একঘেয়ে জীবনের কোলাহল থেকে দূরে সরে যাওয়াই যার মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম যেন সুযোগ পেলেই ব্যাগ পিঠে বেরিয়ে পড়তে পারলে বাঁচে!
ট্রেকিং এর মূল বিষয়টি হয়তো সকলেই জানেন, পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে সর্বোচ্চ ভিউ পয়েন্ট থেকে গোটা জায়গাটা দেখা। তবে যে সে দৃশ্য নয়, একেবারে গোটা পাহাড়ের রেঞ্জ। বেশিরভাগ মানুষই ট্রেক শুরু করে সান্দাকফু দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে কথা! প্রথমবারের অভিজ্ঞতার জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন ট্রেক গাইডরা। কোথা থেকে শুরু হবে ট্রেক? ঘুম থেকে একদিকে দার্জিলিং আরেকদিকে মানেভঞ্জন। সেই মানেভঞ্জন থেকেই শুরু হয় পথ চলা। সান্দাকফু পৌঁছতে ৩ দিন মত লাগে। প্রায় ৩৫ কিমি রাস্তা। আসা যাওয়া মিলিয়ে মোট ৬ দিনের ব্যাপার।
বরফের সময়ে ট্রেক করতে গেলে একা যাওয়া খুব একটা সুবিধের নয়। গাইড ছাড়া সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক থেকে পারমিশন মেলা ভার। চড়াই উতরাই পেরিয়ে এতটা পথ গিয়ে কেবল চক্ষু সার্থক করলেই হবে! এর জন্যই চাই হাজারও সতর্কতা। প্রয়োজনীয় জুতো, জামা তো লাগবেই। পাহাড়ি রাস্তার আরও এক ভালো সঙ্গী হলো নুন, জোঁকের যম। তাছাড়া পথে খিদে পাবে, খাবার সাথে থাকলে ভালো। তবে তা শুকনো এবং হালকা হওয়া চাই। কোনোরকম কোনো প্যাকেট বা প্লাস্টিক যেন পাহাড়ি রাস্তায় ফেলা না হয়। নিজেদের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের। আর তাই পথে মলত্যাগের ব্যবস্থাও পরিবেশ বান্ধব। চেয়ার সিস্টেমে এমনভাবেই মলত্যাগের ব্যাবস্থা করা যাতে তা পরিবেশে মিশে যায়। এক কথায় যা হলো বায়োডিগ্রেডেবল।
সান্দাকফু ট্রেক করে উঠে কী দেখবেন এই নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা না করাই ভালো। চোখ এবং মন দুই’য়েরই আরাম নিশ্চিত। একেবারে উচ্চ স্থানে গিয়ে দেখা মিলবে শায়িত বুদ্ধর। তার সাথে গোটা যাত্রায় পাবেন রডোডেনড্রনের স্বাদ। ইচ্ছে করলে চেখে দেখতেও পারেন এই ফুল। এই ফুল থেকে তৈরি ওয়াইনের স্বাদও মন্দ নয়। তবে বর্তমানে সান্দাকফুর অনেকটাই বাণিজ্যিকরণ হয়েছে। প্রায় সর্বত্রই গাড়ি পৌঁছে যায়। হোমস্টে এবং খাবারের বন্দোবস্তও রয়েছে যথেষ্ট। তবু যেমন দিনে সূর্য ওঠে, পাহাড় আলোকিত হয় তেমনি ট্রেকাররা যাত্রার পথে তাঁবু ফেলে। মাটির সাথে মিশে গিয়ে অভিজ্ঞতা না নিলে অ্যাডভেঞ্চার অসম্পূর্ণ থেকে যায় যেন!
Discussion about this post