২০ জুলাই সকালে প্রয়াত হয়েছেন বর্ষীয়ান বিজ্ঞানী সমর বাগচী। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ভুগছিলেন দুরারোগ্য ক্যান্সারে। তবে তাঁর পরিচয় শুধুমাত্র বিজ্ঞানী হিসেবে নয়। তাঁর দীর্ঘ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিজ্ঞান ও পরিবেশ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, আদিবাসী শিশু শিক্ষার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালক, অপবিজ্ঞান এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংগ্রামী। এছাড়া তিনি ছিলেন এনআরসি আন্দোলন থেকে শুরু করে অসংখ্য সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী। মেধা পাটকরের মতো সমাজকর্মীর সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন ন্যাশনাল আলায়েন্স ফর পিপলস মুভমেন্টে। বিজ্ঞানমনস্কতার সঙ্গেই তাঁর মধ্যে পরিবেশচেতনা ও সমাজ-রাজনৈতিক চেতনার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছিল।
বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় ১৯৩২ সালে জন্ম হয়েছিল সমর বাগচীর। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে বিএসসি শেষ করে যান ধানবাদ ইন্ডিয়ান স্কুল অফ মাইনসে। সেখানে কিছু বছর কাজ করে ফিরে আসেন কলকাতায়। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথমে বিটিআইএম-এর কিউরেটর হিসেবে যোগদান করেন। পরে হন ডিরেক্টর। ৫০০০ বছরের ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া একটি দুই বছরের প্রদর্শনীর অংশ ছিলেন সমর বাগচী। সেখানে ভারতের বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে তিনি ভারতীয় সঙ্গীত এবং ভাষাতত্ত্বের অবদানকে যুক্ত করেছিলেন। সারা ভারত জুড়ে তিনি প্রায় সাড়ে তিনশোটির বেশি বিজ্ঞান বিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করেছেন।
সমর বাগচী নিজেকে বলতেন ৯০ বছরের যুবক। বয়স বাড়লেও তাঁর মন ছিল স্বপ্নে ভরা, তরুণ-তরতাজা। সারাজীবন তিনি কাজ করে গেছেন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ‘স্বল্প মূল্যের ও বিনা মূল্যের উপকরণের জোগান’ সম্পর্কিত বিষয়ের উপর। লড়াই করেছেন ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে। তাঁর কথায় বড়ে গোলাম আলি যখন ‘হরি ওম’ গেয়েছিলেন, তখন মোটেই কোনো ধর্মের কথা ভেবে গাননি। গেয়েছিলেন সমগ্র ভারতীয় শিল্পের জায়গা থেকে।
সমর বাগচী বিড়লা টেকনোলজিকাল মিউজিয়ামের ডিরেক্টর ছিলেন ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। এছাড়া ১৯৮৩ থেকে ’৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি পদার্থ বিজ্ঞানী পার্থ ঘোষের সঙ্গে কলকাতা দূরদর্শনে ‘কোয়েস্ট’ নামক একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তাঁর সারাজীবনের কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মহাত্মা গান্ধীর দর্শন এবং মার্ক্সবাদ। তাঁর ‘পৃথিবীর দিকে ফেরো’ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, “আজ মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে বিলুপ্তির দোরগোড়ায়। জীববৈচিত্র্য লুপ্তপ্রায়। এটি আধুনিকতার সংকট। সভ্যতার নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করা তাই জরুরি এখন।”
Discussion about this post