কল্পনাকে করে তুললেন বাস্তব। রূক্ষ, পাথুরে মাটিতেও ফোটালেন ফুল। শুরু হল চাষের কাজ। সৌজন্যে বাঁকুড়ার শবর গোষ্ঠীর মহিলা শ্রেণী। ‘মেড ইন বেঙ্গল’ নামক রাজ্য সরকারের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্নে মজেছেন তারা। শত প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও ‘সবুজ বিপ্লব’ আনতে মাঠে নেমে পড়েছেন। বাঁকুড়ার ১৩টি শবর পরিবারের মহিলারাই এখন ধরেছেন চাষের হাল। চাষের অযোগ্য জমিতেই ফলনে সাহায্য করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথে আরও এক ধাপ পা বাড়ালেন তারা।
বাঁকুড়া জেলার একটি বড় অংশে চাষ-বাসের কাজ প্রায় বন্ধই ছিল বলা চলে। রুক্ষ পাথুরে ল্যাটেরাইট মাটি আর অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চাষের কাজে বাধা সৃষ্টি করে দাঁড়িয়েছিল। খরার প্রকোপে চাষের ক্ষতিও হয়েছিল বেশ। তবু সব প্রতিকূলতা ভেঙ্গে এবার এগিয়ে এলেন শবর গোষ্ঠীর মহিলারাই। বছর কয়েক আগেই ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশানাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম’-এর মাধ্যমে এই মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার উড়ান শুরু হয়। রাজ্য সরকারের তরফে বড় অংশের পরিত্যক্ত এক জমি লিজ দেওয়া হয় এবং সেখানে আমের ফলনের ব্যবস্থা করা হয়। শবর শ্রেণীর মহিলারা নিজেরাই তৈরি করেন ‘সেল্ফ হেল্প’ বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী। তারপর তারাই রাজ্য সরকারের সেই লিজ নেওয়া জমিতে আম্রপালী আম গাছের চারা লাগান। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই চারা গাছ থেকে ফলন শুরু হয়। অন্যের প্রতি নির্ভরশীল না থেকে সম্পূর্ণ নিজেদের চেষ্টাতেই আম চাষের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন তারা।
শবর মহিলাদের ফলানো এই আম স্বাদে এবং গন্ধেও অতুলনীয়। তাই বাজারে এর চাহিদাও খুব বেশি। শুধু রাজ্যেই নয়, রাজ্যের বাইরে সারা দেশেও ছড়িয়েছে এই আমের বাজার। এমনকি বিদেশেও বাড়ছে এই আম্রপালীর চাহিদা। ফলে অর্থনৈতিক ভাবেও লাভবান হচ্ছে রাজ্য। গ্রামীণ জীবন যাত্রা উন্নতির জন্য রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল মানুষগুলিও এখন আশার আলো দেখছেন। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে যুক্ত থাকা বহু মহিলাই এখন আম চাষের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। সমাজের পিছিয়ে থাকা এই মানুষগুলি এখন সমাজের অন্যতম শক্তি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
চিত্র ঋণ – দুর্গা দাস মোহান্তি
Discussion about this post