বনগাঁর সাতভাই কালী মন্দির, পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় মন্দির। ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দিরটি শুধুমাত্র ধর্মীয় গুরুত্বের কারণেই নয়, এর পিছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় ইতিহাসের জন্যও বিখ্যাত। এই মন্দিরের উৎপত্তি এবং প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি ও কিংবদন্তি প্রচলিত আছে।
সবচেয়ে প্রচলিত একটি কাহিনী অনুযায়ী, প্রায় চারশো বছর আগে এলাকার সাতভাই ডাকাত অবিভক্ত বাংলার যশোরের জমিদার বাড়িতে ডাকাতি করে। জমিদারের সর্বস্ব লুট করে তারা মন্দিরের বাসনপত্রও লুট করে নিয়ে যায়। মন্দিরের জাগ্রত মা তাদের বলেন, সবই যখন নিয়ে যাচ্ছিস আমাকেও নিয়ে চল। আদেশ মতো মায়ের মূর্তি নিয়ে আসে ডাকাতেরা। এরপর তারা দেবীর নির্দেশ অনুযায়ী শশ্মানের পাশে ইছামতীর পাড়ে বটগাছের তলায় কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে। এই ঘটনার পর থেকেই এই মন্দির সাতভাই কালীতলা নামে পরিচিত হয়।
এই মন্দিরের সঙ্গে আরও একটি রহস্যময় ঘটনা জড়িত। কথিত আছে, মায়ের এই মন্দিরে একবার বনগাঁ-খুলনা রেলপথ নির্মাণ করার জন্য বটগাছটি কাটার প্রয়োজন হয়। গাছে কুড়ুলের কোপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের গা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ওই কাজে নিযুক্ত সাহেব রক্ত বমি করে মারা যান। এরপর রেলপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এই মন্দির শুধুমাত্র বনগাঁ নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ভক্তদের আকর্ষণ করে। মায়ের কাছে মানত করে অনেকে মনের মতো ফল পেয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ নির্ণয় করা কঠিন। তবে, মন্দিরটির প্রাচীনতা এবং জনপ্রিয়তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। পৌষ মাসে এই মন্দিরে একটি বড় মেলা বসে যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়। ইছামতী নদী পেরিয়ে নৌকা করেও মায়ের কাছে আসেন বহু ভক্ত। বটগাছে লাল-নীল সুতোয় ঢেলা বেঁধে মানত করেন ভক্তরা। আর মনস্কামনা পূর্ণ হলেই পুজো দিয়ে ওই গিঁট খুলে দিয়ে যান তারা।
চিত্র ঋণ – ইতা দাস
Discussion about this post