বাংলা প্রবাদে আছে ‘রক্ষকই ভক্ষক’। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাইয়ের পরে সেই প্রবাদটিই আক্ষরিক অর্থে সত্যি হয়ে দাঁড়ালো ভারতবাসীর কাছে। জয়পুর থেকে মুম্বইগামী একটি ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের মাঝে প্রকাশ্যেই ঘটলো অবিশ্বাস্য ঘটনা। চলন্ত ট্রেনে আরপিএফ জওয়ানের এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ হারালেন সাধারণ মানুষ সহ একজন আরপিএফ আধিকারিকও। ঘটনাটি ঘটেছে ভোর পাঁচটা নাগাদ, মুম্বইয়ের বোরিভেলি ও মীরা রোড স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে।
অভিযুক্ত কনস্টেবলের নাম চেতন সিং। আচমকাই তিনি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলি ছোঁড়া শুরু করেন। ১২ রাউন্ড গুলি চালান তিনি। প্রাণ হারান তিনজন সাধারণ যাত্রী এবং একজন এএসআই। চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টাও করেছিলেন চেতন। তবে এখন তিনি রেল পুলিশের জিম্মায়। কিন্তু বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। মর্মান্তিক ঘটনাটি বিভিন্ন মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বেশ কিছু মানুষের কাছে ঘটনাটি ‘ঘৃণামূলক অপরাধ’ বা ‘হেট ক্রাইম’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। কারণ, বছর তেত্রিশের চেতন সিং বেছে বেছে গুলি চালিয়েছেন মুসলিম ধর্মের মানুষের ওপরেই। সাধারণ মানুষগুলিকে তিনি চিহ্নিত করেছেন তাঁদের পোশাক দেখে। ভাইরাল হয়েছে ঘটনার ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নিহত যাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়েই চেতন সিং নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথের নামের জয়গান তুলছেন। যদিও সরকারি আদেশে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
রেলে চাকরির পরে নিজের পরিবার থেকে দূরে মথুরায় ভাইয়ের পরিবারে থাকেন চেতন সিং। তাঁর ভাই মথুরাতেই ট্রাক চালান। তাঁরা এই অপরাধের কারণ হিসেবে চেতনের মানসিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন চেতন বরাবরই চাপা টেনশনে থাকতেন, ঠিক মত ওষুধ খেতেন না। চেতনের মস্তিষ্কে ব্লাড ক্লট আছে বলেও তাঁরা জানান। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলি চালিয়ে এই আচমকা আক্রমণের উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তদন্ত চলছে। চেতন সিংয়ের ভিডিওর সঙ্গেই অন্য আরেকটি ভিডিও ক্লিপও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে ট্রেনে এক ব্যক্তি নামাজে বসার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ ঠিক সেই মুহূর্তেই হনুমান চালিশা বাজাচ্ছেন। নামাজ বন্ধ হলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গান। এই অসহিষ্ণুতার পরিবেশ কি ইচ্ছাকৃতভাবেই তৈরি হচ্ছে? রয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন।
Discussion about this post