সমাজের বাঁধাধরা নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন রিয়া ধারা। যেখানে লেদ মিস্ত্রির কাজকে একসময় কেবল পুরুষদের কাজ বলে ধরা হত, সেখানে তিনি নিজের দৃঢ় সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দক্ষ মিস্ত্রি হয়ে উঠেছেন। নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও, বাস্তবে সমাজের কিছু মানুষ এখনও ব্যতিক্রমী পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ মেনে নিতে পারে না। কয়েক বছর আগে যখন রিয়া ধারাকে লেদে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল, তখন অনেকেই তাকে বাঁকা চোখে দেখেছিল, কটূক্তি করেছিল। কিন্তু তিনি সেই সব কটাক্ষকে পাত্তা না দিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন—একদিন তিনি এই কাজে পারদর্শী হয়ে দেখাবেন। আজ সেই প্রতিজ্ঞা পূরণ করে তিনি একজন দক্ষ লেদ মিস্ত্রি হয়ে উঠেছেন।
রিয়ার জীবন যেন এক সংগ্রামের গল্প। শাঁখা-পলা পরা নরম হাতে তিনি মনের জোরে কঠিন লোহাকে নিজের আয়ত্তে এনেছেন। হাতুড়ি পিটিয়ে লোহাকে কখনও সোজা করছেন, কখনও বেঁকাচ্ছেন, আবার কখনও মেশিনের সাহায্যে তৈরি করছেন বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। কঠোর পরিশ্রমের ফলে তার মনোবল ও জেদ লোহার মতোই কঠিন হয়ে উঠেছে। রিয়ার শিক্ষক মধুসূদন হালদার বলেন, “আমি রিয়াকে কাজ শেখাতে পেরে খুব খুশি। এই লাইনে এখনও পর্যন্ত কোনো মেয়েকে কাজ করতে দেখিনি, রিয়াই আমার প্রথম ছাত্রী। ওর শেখার আগ্রহ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
রিয়া ধারা নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন সংগ্রামী নারী। তার বাড়ি জিউধারায়। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, কিন্তু সে কাজে নিয়মিত আয় হয় না। সংসার চালানোর জন্য নির্ভরযোগ্য আয়ের প্রয়োজন ছিল, তাই রিয়া লেদ মিস্ত্রির কাজ শিখে নিয়েছেন। প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রান্না করে ছয় বছরের ছেলেকে স্কুলে দিয়ে তিনি কাজে যান। দিনভর একাগ্র চিত্তে লেদ মেশিনে কাজ করেন—কখনও হাতুড়ি দিয়ে লোহাকে সোজা করেন, কখনও ঝালাই করেন, আবার কখনও নতুন যন্ত্রাংশ তৈরি করেন। সমাজের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি। রিয়ার এই সংগ্রাম প্রমাণ করে, নারীরা যদি চায়, তবে তারা যেকোনো পেশায় নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারে। তিনি সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমরা নারী, আমরা সব পারি।
Discussion about this post