ভিড়বহুল রাজশাহীর রাস্তায় মানুষটি যেন মূর্তিমান জীবনযুদ্ধ। নাকে অক্সিজেনের নল নিয়ে তাঁর রিকশা চালানোর দৃশ্য এখন নেটমাধ্যম জুড়ে ভাইরাল। মানুষটির নাম মাইনুজ্জামান ওরফে সেন্টু। রাজশাহীর কলাবাগানের বাসিন্দা সেন্টু গত পাঁচ বছর ধরেই ভুগছেন ফুসফুসের কঠিন সমস্যায়। বছরখানেক আগে একবার যক্ষ্মা হওয়ার পর তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কিন্তু, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হার না মেনে লড়াইয়ের অনন্য নজির গড়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেন্টু জানিয়েছেন, পাঁচ বছর আগে ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছিলেন তিনি। সেই রিকশাটি চুরি হয়ে যাওয়ায় আবারও আশি হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রিকশা কিনতে হয় তাঁকে। সেই ঋণের কিস্তির পাশাপাশি নিজের অক্সিজেন এবং ওষুধ বাবদ দৈনিক মোট ছ’শো টাকা খরচ হয় তাঁর। পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রীর সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতে হয় তাঁকেই। তাই, আজও রিকশাতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে প্রতিদিনই বের হতে হয় তাঁকে। তাঁর জীবনের একটাই মূলমন্ত্র “কষ্ট করে খেটে খাব কিন্তু ভিক্ষা করব না।” গত ১৪ মে শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে পড়ায় তাঁকে রাজশাহী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে, সুখবর হল, তাঁকে নিয়ে খবর ভাইরাল হওয়ার পরে পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁর চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁর পরিবারের অন্যান্য জরুরি খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, তাঁর জন্যে অবিলম্বে একটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর প্রয়োজন। কনসেনট্রেটরটি কেনার খরচ দিয়েছেন রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম।
এক পাহাড় ট্রাজেডির সামনে দাঁড়িয়েও সেন্টুদের এই শেষতক লড়ে যাওয়া যেন আমাদের মধ্যবিত্ত দুঃখবিলাসের গালে একটা থাপ্পড়। সেন্টু সুস্থ হয়ে উঠুন, ফিরে আসুন তাঁর নিত্যকার লড়াকু জীবনে। ডেইলি নিউজ রিলের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই কুর্নিশ।
Discussion about this post