বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণের ভাষা, আমাদের গর্বের ভাষা। এ অহংকার শুধু আজকের বলে নয়, ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। প্রতিটা শহীদের রক্তের বিন্দু আমাদের মনে করিয়ে দেয় তাদের আত্মত্যাগের কথা। তবে এরপরও রোজকারের চলার পথে “জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা” বলার মত কিছু জনগণের সাথেও আমরা হামেশাই পরিচিত হয়ে চলেছি। সব ভাষাকেই সমান মর্যাদা দেওয়ার বদলে তারা মনে করেন বাংলার কোনো চার্ম নেই, নেই বিশেষ গ্ল্যামারও। তাই বিশেষ কিছু ভাষার পাশে বাংলাকে ঠিক মানানসই লাগে না তাদের। এই চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত গড়লেন কলকাতার বাসিন্দা নিখিলেশচন্দ্র সিংহ। ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের এন্টালি শাখায় বাংলায় চেক লিখে জমা দিয়ে টাকা তুললেন এই ব্যক্তি।
পরিচিত ধারণাকে অমান্য করলে যেমন বাধার সামনে পড়তেই হয় তেমন এক্ষেত্রেও শুরুতে কর্মীরা চেক নিতে অস্বীকার করে। কিন্তু নাছোড়বান্দা ব্যক্তিটিও প্রথম থেকেই তার যুক্তিতে অনড় থাকে। ইংরেজি ভাষা যখন এক্ষেত্রে গ্রাহ্য হয় তখন বাংলা হবে না কেন? নানা তর্কবিতর্কের শেষে ব্যাঙ্কের কর্মীরা নতিস্বীকার করে তার কাছে। তার এই সাফল্যের পরই সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে নিয়ে জোরদার চর্চা শুরু হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন এর আগেও তিনি ব্যাঙ্ক অফ বরোদা-তে বাংলায় চেক লিখে টাকা তুলেছেন। তার অন্যতম একটি পরিচয় হল তিনি বাঙালির জাতীয় সংগঠন বাংলা পক্ষের একজন সক্রিয় সদস্য।
বাংলা পক্ষের লড়াই চলছে গত চার বছর ধরে। সমস্ত ভাষার মতই বাংলা ভাষাকেও তার মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াইয়ে সামিল হয়েছে তারা। ব্যাঙ্ক, রেল, পোস্ট অফিস, বন্দর সহ বেশ কিছু জায়গায় বিদেশি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষার অগ্রাধিকার পেতে আশাবাদী তারা। এমনকি বিভিন্ন শহরের ক্যাফে গুলোতেও বাংলা গান চালানোর দাবিতে সরব হয়েছিলেন তারা। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধান অনুসারে ভারতে বসবাসকারী যেকোনো ভাষাভাষী মানুষ তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় পরিষেবা পাওয়ার অধিকারী।
Discussion about this post