পৃথিবীটা ছোট হতে হতে আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। দেদার ব্যবহার করছি ইলেকট্রনিক গ্যাজেট। কিন্তু, আমাদের চিন্তাভাবনা পড়ে ফেলতে সক্ষম নয় সে। কারন এখনও গ্যাজেটে, তড়িৎ পরিবাহী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সিলিকন চিপ।তাই পৃথিবীর চাহিদার সাথে তাল মেলালেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বায়োলজিক্যাল চিপ তৈরী করার কথা ভাবলেন।
২০২১ এর ডিসেম্বরে এই অদ্ভুত ভাবনার বাস্তবায়ন হল। মেলবোর্নের ক্রটিক্যাল ল্যাবে (crotical lab) জন্ম নিল এক হাঁসজারু চিপ। এই চিপ তৈরি হল, নিউরোন ও ব্রেনসেলকে কাজে লাগিয়ে। সবাইকে তাক লাগিয়ে এই চিপ কাজও করতে লাগলো পুরোদমে। এই চিপে মূল দেহ হিসেবে সিলিকন ব্যবহৃত হল। কিন্তু পরিবাহী প্রতিস্থাপিত হল নিউরোনের সাথে। বিজ্ঞানীরা মানবদেহের মস্তিষ্কের গঠন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই চিপ তৈরীর কাজে হাত লাগালেন। আমাদের শরীরে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যাল আদান প্রদান হয় নিউরোন দ্বারা। প্রথমে বিভিন্ন দেহকোষ থেকে সিগন্যাল সংগৃহীত হয়। তারপর তা মস্তিষ্কে পৌঁছানোর ভার থাকে নিউরোনের উপর।
ব্রেন সেল ও নিউরোন বিদ্যুৎকে কমন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ব্যবহার করে। ঠিক যেমন সিলিকন কম্পিউটারের ধাতব তার কাজ করে। নিউরোনের মতোই এরা সিগন্যালকে সিলিকন বডিতে পৌঁছে দেয়। তাই বিজ্ঞানীরা সিলিকন বডিকে ব্রেন সেল ও ধাতুর তারকে নিউরোন ধরলেন। এরপর চিপের মূল দেহ অপরিবর্তিত রাখলেন। পরিবর্তন করলেন পরিবাহীর। ধাতব তারের বদলে যোগ করলেন নিউরোন। তৈরী হল হাঁসজারু চিপ। ল্যাবে তৈরি ওই দোঁ-আশলা চিপে নিউরোনগুলো যুক্ত থাকলো সিলিকন এর মুল দেহের সাথে। কাজ করলো ধাতব তারের প্রতিস্থাপকের মতো। এখন প্রশ্ন হলো, ধাতব তারের প্রতিস্থাপন করে কী লাভ? এই নিউরোনই পারে নিজের আকার আকৃতির পরিবর্তন করতে। চিত্রের অনুকৃতি তৈরি করতে। সিস্টেম কী চায় তা সে সহজেই বুঝে নিয়ে, নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে সক্ষম। এমনকি ব্যবহারকারীর ব্যবহারের ধরনও সে বুঝে চলে। ভবিষ্যতে এই চিপ লাগানো কম্পিউটার যুক্তিবিচারে পারদর্শী হবে। যা সাধারণ কম্পিউটার পারে না। এমনকি, দশ লক্ষের পঞ্চঘাত করলে যে সংখ্যা দাঁড়ায়, সেই পরিমাণ অপারেশন ঐ হাঁসজারু চিপ প্রতি সেকেন্ডে করতে পারে।
স্টেম সেল পদ্ধতিতে এই চিপ তৈরী করা যায়। এক্ষেত্রে যেকোনো সাধারণ ত্বকের কোষ থেকেই নিউরোন স্যাম্পল সংগ্রহ করা সম্ভব। তাই যে ব্যক্তির থেকে নিউরোন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে তার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নৈতিক মূল্য সংক্রান্ত কিছু বাঞ্ছিত প্রশ্ন থাকলেও কল্পবিজ্ঞান এবার বাস্তবে আসবেই, অন্তত এই চিপ এর আবিষ্কার তাই বলছে।
Discussion about this post