হিন্দু মুসলমান বিবাদ যেন চিরন্তন সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ব্যতিক্রমও থেকে যায় সমানুপাতিক ভাবে। আর তাই বর্তমানকে ছাড়িয়ে অতীতের পাতায় চোখ রাখলে উঠে আসে এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত। রবি ঠাকুরের সঙ্গে নজরুলের আন্তরিকতা ধরা পড়ে যায় পরতে পরতে। “আজি হতে শতবর্ষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/ কৌতূহলভরে, আজি হতে শতবর্ষ পরে।” শোনা যায়, রবি ঠাকুর তাঁর এ কবিতা উৎসর্গ করেছিলেন নজরুলকে। আবার নজরুল এর উত্তর স্বরূপ লিখেছিলেন, “আজি হতে শতবর্ষ আগে/ কে কবি, স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদের/ শত অনুরাগে/ আজি হতে শতবর্ষ আগে।”
বাংলা সাহিত্যের দুই মহান কবির এ দারুণ সম্পর্কের কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি উৎসর্গ করেছিলেন নজরুলকে। ঠাকুরবাড়ির বাইরের কাউকে এই তাঁর প্রথম উৎসর্গ। রবি ঠাকুর নজরুলকে কতটা স্নেহ করতেন তার আরও একটা উদাহরণ ‘গোরা’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটা। কারণ সে ছবিতে স্বয়ং নজরুল ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক।
অন্যদিকে মোজাফ্ফর আহমেদের স্মৃতি কথা থেকে জানা যায়, নজরুল ইসলামের কন্ঠস্থ ছিল অজস্র রবীন্দ্রসঙ্গীত। তিনি নজরুলের এই মুখস্ত বিদ্যা দেখে যথেষ্ট অবাক হতেন। নজরুল কবিগুরুর কাছে আবৃত্তি শুনতে চাইলে, কবিগুরু উল্টে তার আবৃত্তি শোনার অপেক্ষায় থাকতেন। নজরুল রবি ঠাকুরকে বলেছিলেন, একদিন তার কবিতা দিয়ে কবিগুরুকে তিনি খুন করবেন। সত্যিই তাই-ই হল। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ শুনে কবিগুরু বলেছিলেন “সত্যিই তুই আমাকে খুন করেছিস।”
রবীন্দ্র নজরুলে আজও বাঙালি মিলে মিশে এক হয়ে যায়। তাঁদের পরস্পরকে উৎসর্গ করা লেখনী যেন এক হয়ে থাকার সাঁকো। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়েছিলেন নজরুল। তার প্রকাশ পাওয়া যায় নজরুলের বিভিন্ন গানে, কবিতায়। ১৩৪৮ এর ২২শে শ্রাবণ নজরুল ইসলাম আকাশবাণী থেকে পাঠ করেছিলেন ‘রবিহারা’, ‘ঘুমাইতে দাও শান্ত রবিরে।’ রবি ঠাকুরের মৃত্যুর এক বছরের মধ্যেই চিরঘুমের কোলে ঢলে পড়েন নজরুল ইসলামও। বাংলার রবি আর শশী প্রায় একইসাথে নীরব হয়ে যান।
Discussion about this post