জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি নিয়ে আজও যেন আমাদের বিস্ময়ের শেষ নেই। বাড়ির প্রতিটি আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে কত অজানা কথা, কত গল্প। তেমনই অধিকাংশ সদস্যকে ঘিরে ছিল নানান বিতর্ক। তবে তাতে কী! গুণীজন মাত্রই বিতর্কের আধার। আজ তেমনই একজনের কথা চলুন জেনে নিই, যিনি ঠাকুর পরিবারের সন্তান হয়েও জীবনের শেষ আটটি বছর বেচেঁছিলেন একজন খলনায়কের তকমা মাথায় নিয়ে। তিনি আর কেউ নন, ঠাকুরবাড়ির মধ্যমণি অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। একদিকে তিনি ছিলেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন উজ্জ্বল কৃষিবিদ। আবার অন্যদিকে ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য।
রথীন্দ্রনাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র জীবিত সন্তান। বাবার মৃত্যুর পর তিনি নিজের সবটুকু দিয়ে চেয়েছিলেন বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের দর্শন এগিয়ে নিয়ে যেতে। তাই প্রচুর কাজও করেছিলেন। তবে বিপত্তি ঘটল তাঁর এবং বিশ্বভারতীর অধ্যাপক নির্মল চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মীরার প্রেমকাহিনীকে ঘিরে। আসলে স্ত্রী প্রতিমা দেবীর সঙ্গে রথীন্দ্রনাথের বিয়ে সবদিক থেকে সুখের হলেও বিশ্বভারতীর কাজের জন্য তিনি অনেকটা সময় থাকতেন বাড়ি থেকে দূরে। তাই উপাচার্য থাকাকালীন মীরা দেবীর সঙ্গে তাঁর এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন ‘মীরু’। আর এই সম্পর্ককে একেবারেই মর্যাদা দেয়নি শান্তিনিকেতনের লোকজন। তবে জানা যায় এই সম্পর্কে মীরা দেবীর স্বামী বা প্রতিমা দেবী–কেউই কখনও আপত্তি করেননি।
একবার তিনি মীরা দেবীকে নিয়ে হাজারিবাগ গিয়েছিলেন ঘুরতে। আর এই খবরই সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয় শান্তিনিকেতনে। কুৎসা রটানো হয় তাদেরকে ঘিরে। এমনকি সেসময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে। তাই বাধ্য হয়ে ৬৫ বছর বয়সে উপাচার্য পদ ত্যাগ করে মীরা দেবী ও তাঁর আড়াই বছরের শিশু জয়ব্রতকে নিয়ে চলে যান দেরাদুনে। সেখানে তিনি তাঁর শান্তিনিকেতনের বাড়ির মতোই একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন এবং নাম দিয়েছিলেন ‘মিতালী’। জীবনের শেষ কয়েকটি বছর রথীন্দ্রনাথ এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন। তবে তিনি কখনও প্রতিমা দেবী এবং তার সন্তানকে তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করেননি।
চিত্র ঋণ – বঙ্গদর্শন
Discussion about this post