রোড আইল্যান্ডের বিখ্যাত বিচারপতি ‘ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রিও’ এক অদ্ভুত ধরণের মানুষ হিসেবে পরিচিত। একাধারে কঠোর হাতে যেমন নানা কঠিন বিষয়ের ফয়সালা করেন, তেমনই তাঁর মানবিক দিকটিও অজানা নয়। তাঁর বর্ণময় কর্মজীবনে নানারকম উদ্ভট রায় শোনানোর ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
একবার এক বছর পনেরোর কিশোর এক খাবারের দোকানে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। গার্ড ছেলেটিকে পাকড়াও করে। সেখানে ধস্তাধস্তির কারণে দোকানের কয়েকটি কাঁচ ভেঙে যায়। এরপর ফ্রাঙ্ক সাহেবের কাছে সেই মামলা আসে, শুনানি শুরু হয়। সবার প্রথমেই তিনি ছেলেটিকে প্রশ্ন করেন সে চুরি করেছে কিনা। ছেলেটি ইতিবাচক উত্তর দিলে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় সে কী চুরি করেছে আর কেনই বা চুরি করল। উত্তরে ছেলেটি বলে সে রুটি চুরি করেছে। তার কাছে রুটি কেনার মত প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না। বাড়িতে অসুস্থ মা আছেন এবং সে উপার্জনে অক্ষম। তাই তাঁকে খাওয়ানোর জন্যই প্রায় বাধ্য হয়েই সে চুরিটা করে। স্বীকারোক্তিতে কিশোরটি এও জানায়, বহু মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়ার পরেও কেউ সাহায্য করেনি। যদি টাকা থাকত তাহলে সে চুরি করত না।
শুনানি শেষ হয়, আসে রায়-দানের পালা। এরপর বিচারপতি ফ্রাঙ্ক যা বললেন তা শুনে আদালতের প্রায় সকলেরই চোখেই জল এসে গেল। তিনি বললেন চুরি করা অবশ্যই অপরাধ। বিশেষ করে রুটি চুরি করা এক জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু এই অপরাধের দায় তাঁদের সকলেরই। তাই আদালতে হাজির সবাই সেই কিশোরটিকে ১০ ডলার করে জরিমানা দিতে বাধ্য। এরপর তিনি নিজের পকেট থেকে ১০ ডলার বের করে টেবিলে রাখেন। বিচারক আরও বলেন যে দোকানের মালিকটিকে ১০০ ডলার জরিমানা দিতে হবে। কারণ একজন ক্ষুধার্ত কিশোর চুরি করেছে, তাই তাকে ছেড়ে দেওয়াই উঠিৎ ছিল। তা না করে সে আদালতে এসে ছেলেটিকে অসম্মান করেছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জরিমানা না দিলে তার দোকানের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। সবশেষে বিচারপতি জরিমানার সব টাকা ছেলেটির হাতে তুলে দিলেন। সকলের তরফ থেকে ছেলেটির কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। বিচারপতির মানবিকতাও উপস্থিত সকলের মন ছুঁয়ে যায়।
Discussion about this post