এটা কত সাল বলুন দেখি? ২০২১ তাই না! মানে একবিংশ শতাব্দীর কুড়িটা বছর পার করে ফেলেছি আমরা। মানুষের হাতে স্মার্টফোন। কিন্তু মন তো মশাই সেই আদ্যিকালের বদ্দিবুড়ো জায়গাতেই রয়ে গিয়েছে। এদিকে তাকালে ধর্মের গোঁড়ামি ওদিকে তাকালে কুসংস্কারের মালা জপছেন সব। কেন বলছি এসব তাই তো? আচ্ছা মনে পড়ে প্রায় একটা মাস আগে আমাদের সংবাদমাধ্যম থেকে একটি খবর প্রচার পেয়েছিল? এক মেয়ে ঋতুমতী থাকাকালীন সরস্বতীর আরাধনা করেছিলেন। আর সংবাদটি বেশ জনপ্রিয় স্তরেও পৌঁছে যায়। কিন্তু জনপ্রিয়তা মানেই পজিটিভ বার্তা নয়। শুভেচ্ছা কিংবা ভালোবাসার সঙ্গে শতগুণ অপমান অসম্মান হুমকি কুড়িয়েছেন সেই ঊষসী চক্রবর্তী। এমনকি এখনও চলছে সেই রেশ।
সম্প্রতি তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে বেশকিছু মানুষের মন্তব্য স্ক্রিনশটে তুলে দিয়েছেন। যেখানে বহু মানুষের প্রশ্ন সাংবাদিকরা খবর পেল কীভাবে তিনি ঋতুমতী? আবার বেশ কিছুজনের বক্তব্য হিন্দুধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা করছেন তাই বেঁচে গেলেন, অন্যধর্ম হলে ওই ঋতুমতী অবস্থাতেই ধর্ষণের স্বীকার হতেন। আবার অনেকের বক্তব্য শুধুই ‘ফুটেজ খেতে’ এসব নোংরামো। আর এসব শুধুই ফেসবুকেই থেমে থাকেনি। ফোন করে ধমকানো-হুমকিও চলছে দিনের পর দিন। সমাজের বিপক্ষে কিছু করতে চাইলে অবমাননা চিরকাল সহ্য করতে হয়েছে। সে গ্যালিলিওকে হাজতবাস করতে হয়েছে। আর্কিমিডিসকে খুন হতে হয়েছে। আর বিদ্যাসাগরমশাইকে নিয়েও বাঁধা হয়েছে রঙ্গ গান। কিন্তু সে যে বহু বছর আগের ঘটনা মশাই। কিন্তু আজ শিক্ষার আলো যখন অনেকটা এগিয়েছে, সেই দশকে এই ব্যবহার কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত?
সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ সচরাচর তার নিজের বিশেষ কিছু মুহূর্তের ঘটনা কিংবা ছবি শেয়ার করেই থাকেন। আর সেই হিসেবেই ঊষসীও সেদিন তার ঋতুমতী অবস্থাতেও পুজো করার কথা নিজের প্রোফাইলটুকুতে জানিয়েছিলেন। আর সেই শেয়ারটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো। তাঁর ফ্রেন্ডলিস্ট ছাড়িয়ে খবরটি পৌঁছে যায় সংবাদমাধ্যমের দরজায়। আর তারপরই নানা বিপত্তির স্বীকার হয়েই চলেছেন তিনি প্রায় গোটা একমাস ধরে। ঋতুচক্র মেয়েদের একটি সহজ স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। কিন্তু তার জন্য মেয়েদের যুগ যুগ ধরে কুন্ঠাবোধ, ফিসফিস আলোচনা কিংবা লুকিয়ে রাখার যে মানসিকতা, তার কি সত্যিই কোনো যুক্তি আছে বলে মনে হয়? ঊষসীর জানান এই হুমকি বা নোংরা মন্তব্যগুলি যারা করেছেন তাঁদের প্রোফাইল ঘুরে এলে হয়তো তাজ্জব বনে যাবেন আপনিও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা রয়েছেন সেই তালিকায়। তবে কোনো রাজনৈতিক কলুষতা চাননা ঊষসী। সমাজের জটগুলো ছাড়িয়ে সুস্থ মানসিকতার সমাজের স্বপ্ন দেখেন তিনি বরাবার। তাই মানুষের এই ব্যবহারগুলো রাগ নয়, কষ্ট দিয়েছে তাঁকে। তিনি আরও জানান এখনও পর্যন্ত আইনী সাহায্য নিয়ে ওঠেননি। তবে ব্যপারটি আরও মারাত্মক অবস্থায় গেলে অবশ্যই পুলিশি অভিযোগ দায়ের হবে কুরুচিসম্পন্ন মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে।
Discussion about this post