মেদিনীপুরের মাটি জন্ম দিয়েছে বহু অমর আত্মার। রাণী শিরোমণি ছিলেন নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে তিনি। তিনি ছিলেন মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাঈ। অসম্ভব সাহসের সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চূয়াড় বিদ্রোহে। তাঁরই নিদর্শন এখনও দাঁড়িয়ে আছে মেদিনীপুরের মাটিতেই কর্ণগড়ে।
রানী শিরোমণি ছিলেন কর্ণগড়ের রাজা অজিৎ সিংয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। রাজার মৃত্যুর পরে তাঁর অবর্তমানে সিংহাসনের দায়িত্ব পুরোটাই আসে রানি শিরোমণির ওপর। ১৭৬০ সাল থেকে তিনি প্রায় দীর্ঘ ৪০ বছর শাসন করেছেন। এই কর্ণগড়েই অবস্থিত তাঁর আরাধ্যা দেবী মহামায়ার মন্দির। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই মন্দির। মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে এর অবস্থান। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বেশ অনেকটা রাজস্ব আসতো মেদিনীপুর থেকে। কিন্তু দিনের পর দিন কৃষকদের ওপর নির্যাতন বাড়াতেই থাকে ব্রিটিশরা। অতঃপর বিদ্রোহের শিখা জ্বলে ওঠে। এই বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী ছিলেন রানি শিরোমণি। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তিনি নানা ফরমান জারি করেছিলেন।
কর্ণগরে জঙ্গলমহলের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সেই বিদ্রোহের নিদর্শনগুলি। পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পারাং নদী। এই পারাং নদীর গায়েই ছিল রানির গড়। যদিও গড়টিকে প্রশাসনের তরফ থেকে সংস্কার করা হচ্ছে। আজ রানীর মহামায়া মন্দিরটি কর্ণগড় মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরে ঢুকতেই প্রথম একটি বড়ো উঁচু তরুণ দ্বার যাকে স্থানীয় লোকেরা হাওয়াখানাও বলে থাকে। এই মন্দিরের ভেতরে রয়েছি একটি পঞ্চমুন্ডির আসন। রানীর কেল্লা এবং প্রাসাদের অবস্থা প্রায় জীর্ণকায়। কিন্তু আজও কর্ণগরের মানুষ রানিকে ভোলেনি।
বিপ্লবের আগুন মেদিনীপুর জেলা জুড়ে সর্বদাই চরম উত্তাপ ছড়িয়েছে। একটু একটু আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে আছে জঙ্গলমহল খ্যাত এই স্থান গুলিতে। তাঁরই ছাই এখনও আমাদের সকলের চোখের সামনে। রানীর শিরোমণির কেল্লা, প্রাসাদ এবং মন্দির সেই ছাইয়েরই অংশ। মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাঈকে মানুষ কখনই ভুলবে না সেটাই স্বাভাবিক। এই সমস্ত ইমারত গুলি দেখলেই মনে হয় ইতিহাস যেন চোখের সামনে কথা বলছে আজও! কিন্তু ভালো বিষয় হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংরক্ষণের তাগিদে কেল্লা থেকে মন্দিরের বিশেষ যত্ন নেওয়া শুরু করেছেন।
Discussion about this post