নিজের জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সবসময়ই মানুষের কাছে গর্বের। সেই ইতিহাসকে জানার আগ্রহও মানুষের সহজাত। সেই ইতিহাস আবার যদি হয় অখন্ড বাংলায় বৃহত্তর রংপুরের জেলার, তাহলে মানুষের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক! তাই ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর পাঠকবন্ধুদের অনুরোধে আজ আমরা তুলে ধরছি বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারী জেলার তিস্তাপাড়ের পল্লীগ্রামের ইতিহাস ও কিছু খণ্ডচিত্র।
বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ হল রংপুর। সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই জেলা বৈচিত্র্যময় ইতিহাসের ধারক ও বাহক। ছিমছাম সুন্দর এই জনপদের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। ১৮৯২ সালে এখানে ছিল রাজা জানকী বল্লভ সেনের শাসন। এরপর বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এখানে রাজত্ব করেছেন মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায়। এমনকি মহারাণী জয় দুর্গা দেবী চৌধুরানীও ছিলেন বৃহত্তর রংপুরের অন্যতম প্রভাবশালী এক শাসক। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ রাজের আমলে উত্তরের জনপদ রংপুরের কালেক্টর হিসেবে কাজ করেছিলেন সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। রাজা মহারাজাদের চারণভূমি এই রংপুর থেকেই প্রথম বাংলা পত্রিকা ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’ প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালে। পরগণা কুন্ডির জমিদার কালীচন্দ্র রায়ের আর্থিক সহায়তায় এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন গুরুচরণ শর্মা রায়। উনিই ছিলেন পত্রিকার প্রথম সম্পাদক।
বাংলাদেশ তথা পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশমুখ যমুনা সেতু পার হয়ে একদম উত্তরের পথটি চলে গেছে রংপুরে। দেশভাগের পূর্বে উত্তরের বৃহত্তর জনপদ রংপুর জেলা হয়েই জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, হলদিবাড়ি, দিনহাটা, উত্তর দিনাজপুর, রায়গঞ্জ, এমনকি দার্জিলিং-গ্যাংটকেও কাঁটাতারবিহীন পথে মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিলো। এমনকি এখনো যাঁরা বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল বা ভুটান যান, তাঁরাও উত্তরবঙ্গের রংপুর হয়েই যান।
বৃহত্তর রংপুরের পল্লী গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথাও না বললেই নয়। সড়কের দু’পাশে যেদিকেই তাকানো যায়, চোখে পড়ে শুধু দিগন্ত প্রসারিত ক্ষেত। হাঁটুজলসম ছোট ছোট নদীর প্রবাহ, কাঁচা-পাকা ধান ক্ষেত, পাট ক্ষেত, হলুদ সরিষা ক্ষেত, সোনালি ভুট্টা ও আখ ক্ষেত দেখে যেন আপনা থেকেই মনে আসে, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”। কাজেই, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জৌলুশের মেলবন্ধনই রংপুর জেলাকে যুগের পর যুগ ধরে গড়ে তুলেছে গৌরবময় ইতিহাসের এক বিখ্যাত নিদর্শন হিসাবে, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
সম্পাদনা – সুমেধা কর মহাপাত্র
Discussion about this post