‘কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে? বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে’, সমসাময়িক পরিস্থিতিতে মানুষ কার্যতই বড় সস্তা। এই লকডাউন এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বেশ সুখের, বিলাসিতার আর এক শ্রেণীর মানুষের কাছে ঠিক ততটাই বিভীষিকা। আসলে যারা নিঃস্ব হয়েই বাঁচে তাদেরই আরও সর্বহারা করে দেয় এই মহামারী কিংবা ঝড়ের মতো অভিশাপগুলো। প্রতিনিয়তই বেঁচে থাকার পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয় তাদের। তাদের নিয়ে না আছে চিন্তা তাবড়-তাবড় নেতাদের, না আছে চিন্তা সরকারের। কিন্তু তবুও মানুষ তো মানুষেরই জন্য। তথাকথিত সরকারের ভ্রূক্ষেপ না থাকলেও এই অসময়ে অসংখ্য ছেলেমেয়ে, সাধারণ মানুষ এগিয়ে গেছে তাদের জন্য। তাদের মুখে তুলে দিয়েছে অন্ন, কাঁধে রেখেছে ভরসার হাত।
এই ‘মানুষের’ জন্য এবার কলম ধরলেন সৌমিক। কলম ধরলেন তাদের জন্য, যাদের প্রাণ এখনও নির্ভর করে আমার আপনার দেওয়া ‘ত্রাণ’-এর উপর। কমিউনিটি কিচেন বন্ধ থাকলে তাদের পেটেও লকডাউন চলত হয়তো। তাদের জন্য, তাদের দেখেই সৌমিক লিখলেন ‘রক্তরাগের গান’। তার এই গানকে খেটে খাওয়া মানুষের কণ্ঠস্বর বলছেন কেউ কেউ। গানটি ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর, বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের দিন।
সৌমিকের কথায় সুর দিয়ে গানটি গেয়েছেন বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপিকা সঞ্চারী গোস্বামী। সাধারণ মানুষের এই কণ্ঠস্বরকে গানের রূপ দিয়েছেন যারা তারা হলেন, মেলোডিকায় ভাস্কর চক্রবর্তী, ম্যান্ডোলিনে শুভম কাঞ্জিলাল, স্ট্রিং বাজানোর ও গানের অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় অনির্বাণ সেন, রেকর্ডিংয়ে পাপ্পি সোম। সঞ্চারীর সঙ্গে কোরাসে গলা দিয়েছেন সঙ্গীতা ভদ্র, পাপ্পি সোম এবং ভাস্কর চক্রবর্তী, গানের ভিডিওগ্রাফি করেছেন প্রমিত গাঙ্গুলি।
কয়েকটা দিন পিছিয়ে গেলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠবে সেই ছবিটা, যেখানে মাইল মাইল হেঁটে কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। মনে পড়বে সেই ছবিটা যেখানে আমফান পরবর্তী সময়ে উপকূলবর্তী মানুষগুলোর ছাদ বলতে ছিল কেবল আকাশ। তাদের নিয়ে তাদের জন্যই এই রক্তরাগের গান। গানটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই বহু মানুষ গানটি শুনেছেন, জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। সৌমিক এবং সঞ্চারী উভয়ের কথাতেই এক সুর, নাগরিক পরিসরের পাশাপাশি, এই গান যাদের জন্য তাদের ভালো লেগেছে, এটাই প্রাপ্তি। প্রতিনিয়ত যখন ধর্মের নামে রাম-রহিমকে ভাগ করে দিতে চাইছে বিভেদের ঘৃণ্য রাজনীতি, তখন এই গান বার্তা দেয়, “চেতনার অতিমারী পথ বেয়ে মৃত্যু শুধায় নাম,/ তবু বন্ধুর রোজা রাখার শপথে উপবাস করে রাম।”
Discussion about this post