তিলোত্তমা কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য এবং স্থাপত্য হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। কলকাতা সফরে এলে দেশ বিদেশ থেকে মানুষ ভিড় জমায় ভিক্টোরিয়া দেখার জন্য। কিন্তু অনেকই জানে না যে এই অপূর্ব শিল্প সৃষ্টির পিছনে আছেন এক বাঙালি স্থাপত্যবিদ ও শিল্পপতি। তাঁর নাম রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জী। উনিশ শতকের গোড়ায় যখন বাঙালি সবে পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হচ্ছে, তখন রাজেন্দ্রনাথ মার্টিন সাহেবের ব্যবসায় অংশীদার হিসেবে যোগ দিয়ে বাঙালির ব্যবসায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। তিনি একদিকে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ ও অন্যদিকে ইংরেজি জানা কেতাদুরস্ত ব্যবসায়ী।
মার্টিন কোম্পানি, ইসকো, স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন বার্ন কোম্পানি, স্টিল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ছিলেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই জলের কল পৌঁছে যায় প্রতিটা বাঙালির গেরস্থালিতে। তাই তাকে বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন জায়গার জলের কল ব্যবস্থার জনকও বলা হয়।
শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর প্রথম জীবন শুরু হলেও বড় বড় বাড়ি, স্থাপত্য, মন্দিরের গঠন কাঠামো তাকে অনেক বেশি টানতো। তিনি স্বাধীনভাবে কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা করতে চাইতেন। তাঁর ভাবনা এবং প্রতিভায় তৎকালীন কর্পোরেশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ব্র্যাভফোর্ড লেসলি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হন। একে একে তাঁকে বিভিন্ন কাজের কন্ট্র্যাক্ট দিতে থাকেন লেসলি সাহেব। লেসলি সাহেব তাঁর কাজে খুশি হয়ে পলতা জলকলের কন্ট্রাক্ট দেন। কিন্তু হাতে পয়সা না থাকলেও রাজেন্দ্রনাথের কাজই তখন প্রমাণ করে বাঙালি কেবল কেরানি হতে জন্মায়নি। তাই ধারদেনা করে কাজ শুরু করেন তিনি। শুরু হয় স্থপতি রূপে তাঁর কর্মজীবন।
এরপর একে একে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, এসপ্লানেড ম্যান্সনস্, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, রামকৃষ্ণ মিশন, ত্রিপুরা রাজপ্রাসাদ, মহীশূর মেমোরিয়াল, চার্টার্ড ব্যাঙ্ক বিল্ডিংস-এর মতো কলকাতার তাবড়-তাবড় স্থাপত্য তৈরি করেন তিনি। আজও কলকাতার ছবি আঁকার স্কেচ তাঁর এই স্থাপত্যগুলি বাদে ভাবাই যায়না।
Discussion about this post