সম্প্রতিকালে যে বিষয়টি আমাদের বারবার ভাবাচ্ছে, তা হল পরিবেশ দূষণ। আর এই পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ বলতে মাত্রাতিরিক্ত বৃক্ষছেদ। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে গাছ কাটাই যেন আজকের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর চোরাশিকারীদের কারবার তো রয়েছেই। অর্থের বিনিময়ে যারা নিয়মিত ধ্বংস করছে বসুন্ধরার বনজ সম্পদ। কিন্তু এদিকে ‘পরিবেশ দিবস’ এলেই মানুষের যেন টনকটি নড়ে। বছরে ওই একটি দিনই দু’-চারটে গাছ পুঁতে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে দেখনদারির প্রতিযোগিতা। গাছ পুঁতলেই যেন সব সমস্যার সমাধান। গাছটির বিকাশের জন্য যে সারাবছর ব্যাপী সঠিক যত্নের দরকার সেটির খেয়াল আর থাকে না। আজ তাই গাছ বিদ্রোহ ঘোষণা করছে মানুষের বিরুদ্ধে। তুলেছে আওয়াজ। আর তেমনই এক অভুতপূর্ব প্রতিবাদী গাছের হদিশ পাওয়া গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাজ্যে।
যুক্তরাজ্যের ওয়েলেসের সবথেকে দীর্ঘ পাইন গাছটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট হয়েছে বহুদিন। গাছটিকে তাই সম্পূর্ণ কেটে ফেলার কথা ওঠে। কিন্তু শিল্পী সাইমেন রোর্কে গাছটিকে কাটতে তো দিলেনই না বরং নতুন এক রূপে তাকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করলেন। শিল্পী তাঁর কারিগরি দক্ষতায় গাছটির উপরের অংশকে মানুষের উন্মুক্ত হাতের আকারে সাজিয়ে তোলেন। যার ওপর চোখ পড়লেই মনে হবে বিশ্ব অরণ্য সভার প্রধান দলনায়ক এই মৃত গাছটি। এই শিল্পকলাটির ব্যাখ্যা যদিও বহু জনের কাছে বহুমুখী। কেউ মনে করেন গাছেরা বাঁচার জন্য হাত উঁচিয়ে সাহায্য চাইছে। আবার কেউ মনে করেন এটি তরুদলের তীব্র প্রতিবাদের প্রতীক। ব্যাখ্যা যেমনই হোক না কেন, এই আশ্চর্য ভাস্কর্য আমাদের মনকে নাড়িয়ে তুলেছে।
সচেতনতা যে একেবারেই আসেনি তা হয়ত নয়। কিছু প্রকৃতিপ্রেমীর বদান্যতায় পরিবেশ রক্ষার অভিযান আজকাল প্রায় চোখে পড়ে। তাঁদের আপ্রাণ চেষ্টায় একটু করেই গড়ে উঠছে সবুজের বাগান। কিন্তু বৃক্ষ নিধনের হার বৃক্ষরোপনের তুলনায় আজও বহুগুন বেশি। ফলত বিশ্বকে ক্রমাগত গ্রাস করে চলেছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। আর সেই সূত্র ধরেই আসছে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সর্বজনীন সচেতনতা আজ ভীষণরকম জরুরী। শুধু বিশ্ব পরিবেশ দিবস নয় সারাবছর ধরেই তাই আওয়াজ উঠুক সবুজায়নের। চলুক চিরসবুজের মিছিল।
Discussion about this post