২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রায় গোটা উত্তরবঙ্গ কেঁপে ওঠে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায়। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক ড. তাপস পালকে পুলিশ গ্রেফতার করে বধূ নির্যাতন, প্রতারণা, খুনের চেষ্টা সহ একাধিক অভিযোগে। এক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী ছিলেন অধ্যাপকের স্ত্রী ময়ূরিকা রায় যিনি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষিকা। কখনও স্ত্রীর সাথে যুগ্মভাবে বিবাহ বৃক্ষ, তো কখনও একটি পিএইচডি=একটি গাছ রোপণ। আবার বাংলাদেশে ১ মিনিটে ১০০০ চারাগাছ রোপণের সফলতা। বাংলার শিক্ষা জগতে ভাবনা চিন্তার নতুনত্ব নিয়ে আসা অধ্যাপক এরকম অভিযোগে বিদ্ধ হওয়ায় স্বভাবতই হতবাক হয়ে পড়ে রাজ্যের শিক্ষামহল। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন তাপস বাবু। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তি ঠিক কতোটা? খতিয়ে দেখল ডেইলি নিউজ রিল।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কি সত্যি? এই প্রশ্নের উত্তরে তাপস পাল জানান, বিষয়টি যেহেতু আদালতের বিচারাধীন তাই এই বিষয়ে এক্ষুনি মন্তব্য করা উচিৎ হবে না। তবে তিনি আশঙ্কা করছেন, যে কোন সময় তার স্ত্রী ময়ূরিকা রায়ের বাবা শুভ্রাংশু রায় ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে তাঁর এবং তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের ওপর হামলা চালাতে পারেন। তাই এই পরিস্থিতিতে তিনি প্রশাসন ও বিচার বিভাগের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। তাপস বাবু এও জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছেন।
ডেইলি নিউজ রিলের তরফে যোগাযোগ করা হয় তাপস পালের স্ত্রী ময়ূরিকা রায়ের সঙ্গে। প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই বছর আগেই আপনি যখন তাপস পালের থেকে বিচ্ছিন্ন হন, তখন কি ওনার নামে কোনও অভিযোগ করেছিলেন? আমাদের এই প্রশ্নের উত্তরে ময়ূরিকা রায় বলেন, শ্বাশুড়ি এবং আমার চোখের সামনে তাপস পাল তাঁর গার্লফ্রেন্ড সুতনুকা দাসের সাথে সম্পর্ক করেছে। যদিও সুতনুকা দাস একেবারেই ময়ূরিকা রায়ের দাবী উড়িয়ে দিয়ে জানান, “ড. তাপস পাল আমার স্যার, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওনার অধীনে ক্লাস করেছি মাত্র। ময়ূরিকা রায়ের দাবী, একটা মানুষ বেল পেয়ে সবার প্রথমে নিজের মা’কে মুক্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাপস বাবু ওনার গার্লফ্রেন্ড সুতনুকা দাসকে বেল পাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন। এই প্রসঙ্গে সুতনুকা দাস বলেন, তাঁর তত্ত্বাবধায়ক আইনজীবী হলেন রাজু ঘোষ এবং মন্মথ ঘোষ। অন্যদিকে তাপস বাবুর থেকে জানা গিয়েছে তাঁর আইনজীবীর নাম বাদশা গুহ বিশ্বাস ও তাঁর মায়ের উকিলের নাম মৃত্যুঞ্জয় সিংহ রায়।
ডেইলি রিলের তরফে ময়ূরিকা দেবীকে প্রশ্ন করা হয়, তাপস পালের মায়ের কি ক্যান্সার রয়েছে? এর উত্তরে ময়ূরিকা দেবী বলেন, তাপস পালের মা কোনওভাবেই ক্যান্সার রোগী নন। তবে বেঙ্গালুরুর মজুমদার সাউ মেডিকেল সেন্টার, নারায়ণ হৃদালয় সূত্রে জানা গিয়েছে তাপস পালের মা কৃষ্ণা পাল ২০১৬ থেকেই তাঁর ক্যান্সার চিকিৎসা শুরু হয়। ময়ূরিকা রায়ের পরবর্তী অভিযোগ, গরু খাটানোর মতো অমানুষিক অত্যাচার করে তাপস পাল স্কলারদের খাটান।” এই প্রসঙ্গে তাপস বাবুর প্রাক্তন স্কলার ড. শিঞ্চিনী কুণ্ডু সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এরকম অভিযোগ একেবারেই মনগড়া ও ভিত্তিহীন। ময়ূরিকা দেবীর সংযোজন, “আমার বাড়ি থেকে চায়নি এরকম অপদার্থ ছেলের সঙ্গে বিয়ে হোক। ও একজন মানুষরূপী শয়তান (ডেভিল)।” যদিও জানা গিয়েছে, উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৯ সালের আগস্টে তাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছিল। ময়ূরিকা রায়ের বাবা যদিও এই বিষয়ে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকার করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক রায়গঞ্জে তাঁর মায়ের কাছে হাজির হলে ছাত্র-গবেষক এবং এলাকাবাসী মিষ্টি ও ফুলের দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন। তবে এত কিছুর পর ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে আদৌ অধ্যাপক তাপস পাল দোষী নাকি ৪৯৮ এর মতো ধারার অপব্যাবহারের শিকার?
Discussion about this post