“ঘুম পাড়ানি মাসী পিসি মোদের বাড়ি এসো।” এই গান শুনিয়ে এখনও মা, ঠাকুমারা ছোটদের ঘুম পাড়ায়। গান শুনে মাসী পিসি সত্যিই আসে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ! তবে এমন কিছু মানুষ ছিলেন আয়ারল্যান্ড যারা ঘুম পাড়াতে নয় কিন্তু ঘুম ভাঙাতে আসতেন বাড়ি বয়ে।
একটা সময় ছিল যখন অ্যালার্ম ঘড়ি সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা এক রকম সাধ্যের বাইরে ছিল। তাছাড়াও তার ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল না। কিন্তু কাজের তাগিদে সময় মতো ঘুম থেকে ওঠার জন্য প্রয়োজন ছিল অ্যালার্ম ঘড়ির। আবার ঘড়ি একপ্রকার বিলাসিতার জিনিস ছিল বললে ভুল হয় না। আয়ারল্যান্ডের মানুষ এই দ্বিধা থেকে বেরাবার জন্য বানিয়ে ছিল এক বুদ্ধি। উনিশ শতকের শুরুর দিকে শিল্পের চাহিদা বাড়তে থাকে তার সাথে বাড়ে মানুষের কাজের চাহিদা। খুব ভোরে উঠে কাজে যেতে হত সাধারণ মানুষ এবং শ্রমিকদের। আর তাদের ঘুম ভাঙানোর জন্য নিযুক্ত করা হত ‘ঘুম ভাঙানিয়াদের’। এমনই একজন ঘুম ভাঙানি মাসী পিসি ছিলেন- মেরি অ্যান স্মিথ। তাঁর চাকরিই ছিল মানুষের ঘুম ভাঙানো। কিন্তু কীভাবে? তিনি মুখের মধ্যে পাইপ নিয়ে মটরশুঁটি জানালায় ছুঁড়ে জাগাতেন মানুষদের। শুনতে বড়োই আশ্চর্য জনক লাগলেও এটিও এক সময় বহু লোকের রুজি রোজগার ছিল। শুধু যে মটরশুঁটির দানাই যে কেবল জানালায় নিক্ষেপ করা হত তা নয়, থাকতো বাঁশের সরু লাঠি, বোতাম। সপ্তাহিকভাবে এই কাজের জন্য তাদের দেওয়া হত টাকা।
মেরির মতো এই পেশায় নিযুক্ত ছিলেন আরও অনেকেই। কর্মচারীরা বেশির ভাগ ছিলেন বয়স্ক তবে অনেকে সময় স্থানীয় কনস্টেবলরাও এই কাজ তত্ত্বাবধান করতেন। ইতিহাসে খুঁড়লে এমন অনেক মৃত কাজের সন্ধান আজও পাওয়া যাবে! সময় চাকা ঘুরেছে যত তত মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান আমাদের অনেক এগিয়ে নিয়ে এসেছে। একটা সময়ে ঘুম ভাঙানোর চাকরি দেওয়া হত মানুষকে। কিন্তু আজকাল তো ঘড়িও নাকি আবার বুদ্ধিমান। মানুষের জায়গা তো ক্রমশই নিয়ে নিচ্ছে মানুষের তৈরি যন্ত্র!
Discussion about this post