মানুষ বলে “নাচতে না জানলে উঠোন ব্যাঁকা।” তবে নাচতে গিয়ে উঠোনে লেগে থাকা শ্যাওলায় পিছলে গিয়ে মানুষ পড়তেই পারে ধপাস করে। কিন্তু শ্যাওলা কি শুধু ক্ষতিই করে নাকি মশাই? আমরা অনেকেই জানিনা এই শ্যাওলাই বাস্তুতন্ত্রে একটি বড় ভূমিকাও পালন করে। এরকমই এক প্রজাতির শ্যাওলা হল পসিডোনিয়া, যা ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় সমুদ্রের তলায় কার্পেটের মতো বিছানো রয়েছে।
ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় সমুদ্রিক এই শ্যাওলা আমাজনের জঙ্গলের থেকে প্রায় ১৫ গুণ বেশি কার্বন শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। ভূমধ্যসাগরের তলায় বিরাট অংশ জুড়েই এই পসিডোনিয়ার রাজত্ব। তবে এর সর্বাধিক ঘনত্ব লক্ষ্য করা যায় মারলোকা থেকে ফরমেন্টেরা দ্বীপ পর্যন্ত। এই অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ে। আর এটিই বিজ্ঞানীদের চিন্তার বিষয়। বিজ্ঞানীদের দাবী যে ২০১৮ তে ইয়াচের নোঙর ফেলার ফলে এখানে পসিডোনিয়ার বাস্তুতন্ত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষয় সেরে উঠতে প্রায় হাজার বছর সময় লাগবে। পর্যটকরাও এখানে এসে যে প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস ব্যবহারের পর তা সমদ্রে ফেলে। এই বিষয়ে চিন্তিত স্পেন সরকার সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় তা কতটা কার্যকর হয়।
পরাগ রেণুর সাহায্যে বংশবিস্তার হলেও এই পসিডোনিয়ার মূল প্রজনন হয় বিভাজন প্রক্রিয়ায়। তবে বিশ্ব উষ্ণায়ন এই প্রজাতির বিলুপ্তির পিছনে একটি বড় কারণ। পসিডোনিয়া ২৮ ডিগ্ৰীর বেশি তাপমাত্রায় দূর্ভাগ্য বশতঃ জীবিত থাকতে পারে না। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রাও বাড়ছে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায়। এই অঞ্চলে পসিডোনিয়া ব্যাপক হারে তাই হ্রাস পাচ্ছে। আর এটাই এখন একটি বড় চিন্তার বিষয়।
আসলে জীব জগতের প্রত্যেকটি প্রাণীর নিজ নিজ প্রকৃতির প্রতি কিছু কর্তব্য ও দায়িত্ব আছে। আমরা মানুষেরা বেশির ভাগ সময় তা পালন করিনা। কিন্তু এই বলতে না পারা চলতে না পারা জীবেরা অক্লান্তভাবেই এক প্রকার জীব জগতের তথা মানুষের জন্য দায়িত্ব পালন করে যায়। আমরাই তাদের প্রকৃত মূল্য দিই না। আজ আমরা বহু এমন জীবের বিলুপ্তির জন্য দায়ী। সময় থাকতে তাই আমাদের প্রকৃতির প্রত্যেকটা প্রাণীকে সংরক্ষণ করতে হবে কারণ এভাবেই পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে পসিডোনিয়ার মতো হাজার হাজার জীব বৈচিত্রের প্রজাতি।
Discussion about this post