পর্বতমালা ও সবুজের হাতছানি বেষ্টিত বৃষ্টিস্নাত শীতল আবহাওয়ার রুপোলি সৌন্দর্য মাখা দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র পর্তুগাল। ভারতের ইতিহাসে পর্তুগীজদের আনাগোনাও ছিল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। সেই পর্তুগীজদের দেশ পর্তুগাল বলতে সবার প্রথমেই যা মনে আসে তা হল ফুটবল, শহরজুড়ে ব্যস্ত কফি শপ, ঝাঁ ঝকঝকে জীবনযাত্রা, আনন্দোচ্ছ্বল তরুণ প্রজন্ম কিংবা হাসিখুশি একটা দেশ।
অথচ জানেন কি সেই পর্তুগীজরা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করে দুঃখ-বেদনা শোক। যা সত্যিই অবাক হওয়ারই মত। হয়তো পৃথিবীর বুকে পর্তুগাল’ই প্রথম দেশ যারা বংশপরম্পরায় শোককে বহন করে। পর্তুগাল মানে যেমন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো কিংবা লুইস ফিগোর ফুটবলে পায়ের জাদু। তেমনি পর্তুগাল মানে ‘ফাদো’ ও ‘সউদেদ’। বিষাদ সঙ্গীত চর্চার অন্যতম আঁধার এই পর্তুগাল। এই ‘ফাদো’ গানের মধ্যে দিয়ে হৃদয়ের আবেগ,ব্যথা, হারানোর শোক সবকিছু ব্যক্ত করে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আর অপরদিকে ‘সউদেদ’ শব্দের অর্থ ‘নস্টালজিক সময়’।
আনুমানিক ১৮২০ সাল নাগাদ ‘ফাদো’ মিউজিকের চর্চা শুরু হয়। পর্তুগাল তখনও পর্তুগাল হয়নি। পর্তুগালের জন্মের অনেক আগেই জন্ম হয় এই বিষাদ মেশানো সুরের। পর্তুগীজদের ইতিহাসে রয়েছে সমুদ্রযাত্রা থেকে শুরু করে বহিঃশত্রুর আক্রমণ, একনায়কতন্ত্র, প্রিয়জনকে হারানোর মতো বহু ঘটনা। আর সেইসব দুঃখ মেশানো সুর কথায় মিলেমিশে এই বিষাদ সংগীতকে করে তুলেছে শ্রেষ্ঠ। বর্তমানে গানের আধুনিক কথা, সুর কিংবা আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের পরেও ‘ফাদো’ সংগীতের মাধুর্যতা আজও অটুট। পর্তুগালে সঙ্গীত ছাড়াও শিল্প-সংস্কৃতি চিত্রকলা সর্বত্র ছাপ ফেলেছে বিষাদ। অপরদিকে ‘সউদেদ’ এ মিশে আছে গভীর ভাবাবেগ। যা বংশ পরম্পরায় রীতি অনুযায়ী বহন করে চলেছে পর্তুগিজরা।
পর্তুগীজদের এমন বিষাদ প্রিয় মানসিকতা নিয়ে গবেষণাও চলেছে বিস্তর। মনোবিদদের মতে, বিষাদ স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। বিষাদে বিচার শক্তি বাড়ে। যদিও তার প্রভাব কতটা পর্তুগীজদের মধ্যে পড়েছে তার সদুত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তবুও এক দেশের সংস্কৃতি এক দেশের ভাবাবেগ এক দেশের উত্তরাধিকার প্রেম সবে মিলে এক অভিনব তাৎপর্য আজও বহন করে চলেছে পর্তুগিজরা। আর এখানেই সাংস্কৃতিক জগতে পর্তুগালের অভিনবত্ব।
Discussion about this post