রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যাওয়া বাঙালি দিনমজুর, বিশেষত মুসলিমদের ওপর বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রতিককালে পুলিশি হেনস্থার ঘটনা বেড়েছে। দিল্লি, নয়ডা, গুরগাঁও, রাজস্থান, বেঙ্গালুরুর মতো জায়গায় শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মালদহের বাঙালি শ্রমিক আমির আলী শেখ, পেটের তাগিদে রাজ্য ছেড়ে রাজস্থানে কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে শুধুমাত্র বাংলা বলার ‘অপরাধে’ তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। এমনকি ভারতের সঠিক নাগরিকপত্র দেখিয়েও তিনি রেহাই পাননি। একইরকম ঘটনা ঘটেছে গুরগাঁওতেও, সেখানেও বাঙালি মুসলিম অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে। আর এমন ঘটনা দেখে অনেকের মনেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে, এখন শুরু হয়েছে শ্রমিকদের দিয়ে, এরপর বাংলার সাধারণ আমজনতার ওপরেও হয়তো এভাবেই বাংলাদেশি ট্যাগ লাগানো শুরু করবে অন্যান্য রাজ্যের মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে বাঙালি শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে (৯১৪৭৭২৭৬৬৬), যেখানে রাজ্যের বাইরে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। শুধু মেসেজ করলেই হবে, জানাতে হবে নাম, ঠিকানা ও সমস্যার বিবরণ। জেলা কন্ট্রোল রুমেও বিষয়টি জানানো যাবে। এরপর রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য, রাজ্যের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তবে এই উদ্যোগ যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক নেটিজেন। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পোস্টের নিচে কমেন্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন, এই একটি নম্বর ফেসবুকে পোস্ট করলেই কর্তব্য শেষ হয়ে যায়? যাঁদের ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ নেই, তাঁরা কী করবেন? যদি পুলিশ ফোনটাই কেড়ে নেয়, তখন কীভাবে যোগাযোগ হবে? সে ব্যাপারে আপনারা কি ভেবে দেখেছেন? আরেকজন, ব্যবহারকারী মালদহের ওই শ্রমিকের সঙ্গে ঘটা এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার ব্যাপারে বর্ণনা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফেসবুকে পুলিশের এই পদক্ষেপের বিষয়ে সাধুবাদ জানালেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার পুলিশের উদাসীন মনোভাব নিয়েও। সব মিলিয়ে বাংলার শ্রমিকদের দুর্দশা আমাদের আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় — জাতি, ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে শ্রমিকদের প্রতি প্রশাসনের পক্ষপাত ও নির্মমতা কতটা ভয়ানক হতে পারে। এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক সজাগতা ও সমাজের সক্রিয় সচেতনতা, দুটোই এখন সময়ের দাবি।
Discussion about this post