বর্তমান দিনে ইন্টারনেটের নাম শোনেন নি এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় হাতে গোনা। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তবে মজার বিষয় এই যে, ইন্টারনেট শুধু মানুষই ব্যবহার করে তা কিন্তু নয়। বরং প্রকৃতিরও ইন্টারনেট ব্যবহারের কথা জানা যায়। কী? অবাক হচ্ছেন তো! আরও অবাক হবেন যখন জানবেন এই প্রাকৃতিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা মানুষের আবির্ভাবেরও আগে প্রায় লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে উদ্ভিদেরা।
ইন্টারনেট সিস্টেমে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য মূলতঃ তামার তার, অপটিক্যাল ফাইবার এবং বেতার তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়।এখন প্রশ্ন হল যে, প্রাকৃতিক ইন্টারনেট সিস্টেমে এক গাছের সাথে অন্য গাছের সংযোগ স্থাপন করে কে? এর উত্তর হল ছত্রাক। হ্যাঁ, ছত্রাকই হল পৃথিবীর প্রাকৃতিক ইন্টারনেট। ছত্রাকের মূল শরীর অনেকাংশে স্যাটেলাইটের মত কাজ করে এবং ছত্রাকের মাইসিলিয়াগুলি তামার তার বা অপটিক্যাল ফাইবারের মতো কাজ করে। ছত্রাক সাধারণতঃ গাছের মূলে আশ্রয় নেয়। মানুষের আবিষ্কৃত ইন্টারনেট ব্যবস্থায় যেমন একাধিক কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে, তেমনই ছত্রাকের মাইসিলিয়ামের মাধ্যমে একাধিক গাছ একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। স্থলভাগের প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে ছত্রাক থেকে বের হওয়া মাইসিলিয়া। এছাড়া জলেও ভাসমান অবস্থায় মাইসিলিয়াম কোষ পাওয়া যায়। তবে মাইসিলিয়াম সাধারণতঃ মাটির নিচেই বিস্তার লাভ করে। এরা বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এই সংযোগের মাধ্যমেই একই প্রজাতির অথবা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান ঘটে। তথ্য প্রদানের এই পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষতিকর কোনো জীবাণু বা কীট থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য সংকেতও প্রদান করে তারা। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশের হঠাৎ পরিবর্তনেও সাড়া দেয় মাইসিলিয়া। এই সমস্ত বিষয়টিকে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ‘wood wide web’ নামে আখ্যা দেওয়া হয়।
১৯৭০ সালে প্রথমবার পল স্ট্যামেটস প্রাকৃতিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেন। তবে ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সুজান সিমার্ড সর্ব প্রথম ছত্রাকের ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। এই প্রাকৃতিক ইন্টারনেট ব্যবস্থায় বৃহৎ উদ্ভিদ থেকে শুরু করে ছোট উদ্ভিদও সাহায্য পায়। এই সাহায্য ছাড়া অনেক চারাগাছ হয়ত বাঁচতে পারতো না। ১৯৯৭ সালের এক গবেষণায় “বেঁচে থাকার জন্য সবাই একে অপরের উপর নির্ভরশীল” কথাটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। উদ্ভিদ জগতের নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা থাকার ফলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুধু যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে – এই কথাটি ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে।
Discussion about this post