সুন্দরবন, বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত প্রশস্ত বনভূমি। সাগরের বুকে জেগে ওঠা সুন্দরবন শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এখানকার নদ-নদী, মোহনাগুলি মৎস্য সম্পদের এক বৃহৎ ভান্ডার। সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ। সুন্দরবনে মোট ২০৪ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যার মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির চিংড়ির সন্ধান পাওয়া যায় এই অঞ্চলে। তবে তাদের মধ্যে অন্যতম ও জনপ্রিয় ফুল চিংড়ি।
অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসে বড় নদীতে এই চিংড়ির প্রাধান্য দেখা যায়। .৬৫ সেন্টিমিটার থেকে ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয় এই প্রজাতির চিংড়ি। এদের সারা শরীর সাদা হয়, তবে লেজ ও মুখের কাছে লাল রঙের হয়। দীর্ঘ লাল শুঁড় সমন্বিত এই চিংড়ি বিশালাকার ঝাঁক বেঁধে বড় নদীতে বিচরণ করে। সুন্দরবনের ফুল চিংড়িকে কেন্দ্র করে সাধারন মানুষের মধ্যে এক তীব্র উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার রায়মঙ্গল নদী থেকে বিদ্যাধরী ও মাতলা নদী পর্যন্ত বসিরহাট, ক্যানিং, বাসন্তীর সহ বিভিন্ন গ্রামের মৎস্যজীবীরা এই চিংড়ি ধরে থাকেন। বিশেষ ভাবে নির্মিত এক ধরণের অতি সূক্ষ্ম বেঞ্চি জালে এই প্রজাতির চিংড়ি ধরা হয়। সুন্দরবনে একসাথে কয়েক হাজার যন্ত্র চালিত জেলে নৌকো এই চিংড়ি ধরার মহাযজ্ঞে সামিল হয়ে পড়েন। সারা সুন্দরবনে পাঁচ হাজারের বেশি এমন চিংড়ি শিকারী নৌকো আছে। প্রতিটি নৌকোয় তিনজন জেলে থাকেন।
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার-ভাঁটা বয়ে যায়। প্রতিদিনে দু’বার করে ধরা হয় এই চিংড়ি। পঞ্চমী থেকে একাদশী তিথিতে জোয়ার শুরুর সময় জাল পাতা হয় এবং ভাঁটা শুরুর মুহূর্তে জাল তুলে নেওয়া হয়। বছরের তিন মাসে মরাণীর মোট ৪৫-৫০ দিনে গড়ে ৩ কুইন্টাল চিংড়ি প্রতিদিন ধরা পড়ে প্রতিটি নৌকোয়। যার গড় মূল্য ৬০০০/ ৭০০০ টাকা। এই তিন মাসে তাঁরা নৌকো প্রতি প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন।
সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার রাজ্য সহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদের ওপর উপযুক্ত গবেষণা করা হয় না। যার ফলে এখানকার জীববৈচিত্রের আশানুরূপ উন্নতি ঘটছে না। তবে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে মৎস্য দফতরের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ মৎস্য সম্পদের জরিপ। এছাড়া গত দুই মরসুম ধরে বনবিভাগ প্রজনন কাল নির্বিঘ্নে রাখতে বছরে দু’মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। যা মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বড় ধরনের পদক্ষেপ। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি সুন্দরবনের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – অনিমেষ সিনহা
Discussion about this post