করোনা নিয়ে চারপাশে আজ টালমাটাল পরিবেশ। চলছে লকডাউন তাই প্রায় টেনেটুনেই সংসার চালাচ্ছেন বেশিরভাগ পরিবার। সব থেকে বিপদে পড়েছেন রোজকার দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভিন রাজ্য থেকে আসা অসংগঠিত শ্রমিক বা দিনমজুর। লকডাউনের ফলে হাতে কাজ নেই, তাই জুটছে না রোজকার প্রয়োজনীয় খাবারটুকুও। এই অবস্থায় তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে বাংলার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এর আগেও বহুবার সমাজের এই প্রান্তিক মানুষদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন তারা। এবার আরও সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় তারা গড়ে তুলেছেন ‘পিপলস কিচেন’ বা জনসাধারণের রান্নাঘর’।
উদ্যোগটি মূলতঃ ফেসবুকে ‘কোয়ারেন্টাইন স্টুডেন্ট ইয়ুথ নেটওয়ার্ক’ নামে এটি গ্রুপের সদস্যদের যৌথ প্রয়াস। লকডাউনে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলের খেতে না পাওয়া শ্রমিকদের দু’বেলা খাবার জোগানোর দায়িত্ব নিয়েছেন তারা। মানুষের কাছে ঘুরে ঘুরে চাঁদা তুলে ও রান্নার সরঞ্জাম জোগাড় করে জনসাধারণের জন্য রান্না করছেন তারা। এরপর পুলিশের সহযোগিতায় আশেপাশের মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছেন রান্না করা ভাত-ডাল বা গরম খিচুড়ি। এর আগেও এই ছাত্র-যুবর উদ্যোগে কলকাতায় আটকে পড়া শ্রমিকদের রেশনের সামগ্রী বিলি করা হয়েছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে যাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি মজুত নেই, তারা বেশ সমস্যাতেই পড়েছিলেন। তাই শুধুমাত্র রেশনের বদলে রান্না করা ভাত-ডাল তাদের মুখে তুলে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে এই পড়ুয়ারা।
তবে শুধুমাত্র শহরে নয়, গ্রামের দিকেও একই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে সেখানে পদ্ধতি কিছুটা উভমুখী। গ্রামবাসীদের সাহায্যেই চাঁদা তুলে বা রান্নার সামগ্রিক জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গ্রামেরই কিছুজন মিলে রান্না করে তা বিলি করে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে শুরুর দিকে পুলিশের সব রকম সাহায্য পেলেও ইদানীং তা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপও করেন উদ্যোগীদের কিছুজন। দু’দিন আগেই খাবার বিলি করার সময় রাস্তায় আটকানো হয় কিছু পড়ুয়াকে। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর ছাড়া পেয়ে সেগুলি বিলি করতে সক্ষম হন তারা। তাই পুলিশের কাছে তাদের একান্ত অনুরোধ প্রশাসন যেন আগের মতই সাহায্যের হাতটুকু বাড়িয়ে দেন। এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে জনসাধারণের কাছেও তারা সাহায্যের অনুরোধ রাখেন। এই ‘পিপলস কিচেন’ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অথবা চাল, ডাল, সব্জি অথবা পরিবহনের জন্য গাড়ি দিয়ে তারা যেন সাহায্য করেন, এই আবেদনও রেখেছেন তাঁরা। তবেই সকলের যৌথ প্রয়াসে জনসাধারণের রান্নাঘর সফল হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই মনে করছেন আয়োজকরা।
করোনা আতঙ্কে কেটে গেল প্রায় একটা গোটা বসন্ত। এর মধ্যেই অভুক্ত কিছু মানুষকে দু-মুঠো খাবারের আশা দেখাচ্ছে এই ছাত্র সমাজ। তাদের এই প্রচেষ্টাই জানিয়ে দেয় এই অস্থির সময়েও তারা বিশ্বাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই সংহতিতে। বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই করোনা-উত্তর সমাজে এক নতুন ভোরে আলোর সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা আজও। যেখানে মানুষ লড়বে মানুষের জন্য, ভেদাভেদ ভুলে গাইবে সংহতিরই গান।
Discussion about this post