“পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয় রে চলে আয়.”পৌষের বিদায় লগ্ন। চাষের ক্ষেতের ধান আড়তে তোলা হয়েছে। এবার নতুন ধানের বরণ পালা। গ্রামের মেয়ে বৌ-রা ঘরের মেঝে দেওয়াল জুড়ছে আলপনার শৌখিনতায়। ঘরে ঘরে পিঠেপুলির তোড়জোড়। পৌষের বিবর্ণ চেহারাতে এখন লেগেছে উৎসবের জৌলুস। আলসেমির আড়ষ্টতা কাটিয়ে শুরু হয়েই গিয়েছে উৎসবের আড়ম্বর। নৈবেদ্যতে চড়বে বাহারি পিঠের ভোগ। সাঁঝ নামলেই তুলসী তলা আলোয় ভরবে। শুরু হবে বাড়ির বৌ’দের মেঠোসুরের গান। আর বাংলার বহু জায়গায় আকাশ জুড়ে চলছে ঘুড়ির ঘোরাঘুরি। কানে আসছে ভোকাট্টার অদম্য উল্লাসটা। আজ চলুন তবে ঘুড়ি নিয়ে কয়েকটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ঘুড়ির সঙ্গে আলাপটা মূলতঃ চিনারাই প্রথম করিয়েছে। ধীরে ধীরে সেটি ছড়িয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, কোরিয়া, জাপানের বুকে। বাঁশের কঞ্চি অথবা অন্যান্য নরম কাঠ দিয়ে ঘুড়ি তৈরী করা হয়। প্রাচীনকালে ঘুড়িকে ব্যবহার করা হত সামরিক কাজে। নৌবাহিনীর গোলন্দাজরা লক্ষ্যভেদের অনুশীলনের জন্য ঘুড়ি ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন এটি নিছক এক খেলার উপকরণ। চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুন পাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি লেজ, পাল তোলা জাহাজ বহু ধরনের ঘুড়িতে চোখ ধাঁধানোর বিপুল সুযোগ।
আমাদের দেশে বিশ্বকর্মাপূজার দিনের(ভাদ্র সংক্রান্তির)ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথাটি রয়েছে। বাংলাদেশে সেটিই এই পৌষসংক্রান্তিতে। পৌষ সংক্রান্তির পরের দিন ঘুড়ি উৎসবটি এখানের বাংলার কোথাও কোথাও চোখে পড়ে। বর্ধমানের দামোদর নদীর তীরে আয়োজন হয় ঘুড়ি উৎসবের। ওদিকে পুজো চলে বড়াম,বড়ামবুড়ির বা বড়ামচণ্ডীর। মেদনীপুর শহরে বড়াম পুজোর দিনেই মূলত ঘুড়ি ওড়ানো হয়। বর্ধমানের সদরঘাটে দামোদর নদীর উভয় তীরে পৌষ সংক্রান্তিতেই বসে রকমারি ঘুড়ির মেলা। বাঁকুড়া জেলার রাইপুর থানার লাউপাড়া গ্ৰামের খাঁদারাণীর অম্বুবাচীর বার্ষিকীতে ছাতাওড়ানোর মেলা। পৌষ সংক্রান্তির দিন বা ১ লা মাঘে দক্ষিণ২৪-পরগনার বারা পুজোতেও ঘুড়ি ওড়ানোর একটা চল দেখা যায়। আর শহর কলকাতাতেও অঞ্চল বিশেষে ঘুড়ি ওড়ানো হয়ে থাকে। বাঁকুড়া-রাইপুরের ফুলকুসমা গ্ৰামে গ্ৰামদেবতা কালামহাদনের ১লা মাঘের বার্ষিকীতে ঘুড়ি ওড়াতো গ্ৰাস্থ যুবকেরা।
আধুনিকতার যুগে হাতে ভিডিও গেমের চপলতা থাকলেও হারায়নি আদি বাংলার এই ঐতিহ্যটি। তবে এই ঘুড়ি উৎসবে মেতে ওঠার আগে পরখ করে নিন মাঞ্জাটি ‘চিনা মাঞ্জা’ নয়তো। কারণ ধারালো নাইলনের সুতোর ওপর মাঞ্জা দেওয়া। আর এতে শুধু আঙুল নয়, অসাবধানতায় কাটতে পারে আপনার গলাও!
Discussion about this post