বাঙালির ক্যালেন্ডারে ডিসেম্বরের আগমন মানেই টাটকা শীতের সব্জি, কব্জি ডুবিয়ে চড়ুইভাতি অথবা একটু নিরিবিলি, চিন্তাহীন পরিবেশের টানে এদিক-ওদিক পাড়ি। পাহাড়প্রেমী বাঙালির কাছে একটি পরিচিত নাম সিকিমের সিল্করুট। প্রাচীন ভারতের ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসারে এই সিল্ক রুটের অবদান অনস্বীকার্য। তাই প্রতি বছর অধিকাংশ বাঙালিই প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা, ৬৯০ কিমি যাত্রা করে বেড়াতে যান নাথুলা পাস সংলগ্ন এই সিল্ক রুটে। যা বেশ খরচসাপেক্ষ। তাই মধ্যবিত্তের হাতের মুঠোয়, শখ পূরণের এক বিকল্প হতে পারে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের আরেক সিল্ক রুট পাত্রাতু ভ্যালি। এর রূপ বৈচিত্র্য কোনোভাবেই আপনাকে আসল সিল্ক রুটের সৌন্দর্য্য থেকে নিরাশ করবে না।
কলকাতা থেকে মাত্র ৪৩০ কিমি দূরে অবস্থিত ছোটোনাগপুর মালভূমির অংশ পাত্রাতু ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলায় অবস্থিত। রাজধানী রাঁচি থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৪০কিমি। হাওড়া থেকে রাঁচিগামী যে কোনও ট্রেনে রাঁচি এসে একটি গাড়ি ভাড়া করে সোজা চলে আসুন পাত্রাতু। চারিদিক পাহাড়ে ঘেরা অপরূপা পাত্রাতুর প্রাণবিন্দু হলো ‘নালকর্নী’ নদী। যার ওপরে গড়ে উঠেছে একটি বাঁধ, যার পরিকল্পনা করেছিলেন ভারতখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার মোক্ষগুণ্ডম বিশ্বেশ্বরায়। সুবিশাল এই বাঁধটি সমগ্র রামগড় শহরের পাশাপাশি পাত্রাতু থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের জল সরবরাহের দায়িত্ব একাই বহন করে চলেছে। বাঁধটির পাশে পাড় বরাবর গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর রিসর্ট যার মনোরম পরিবেশ আপনার মন ভোলাবেই। বাঁধের এক পাড়ে রয়েছে সুপ্রাচীন পঞ্চবাহিনী দুর্গা মায়ের মন্দির। স্থানীয়দের আস্থা, মায়ের মন্দিরে তৈরী হওয়া নবদম্পতির গাঁটছড়ার বাঁধন সারাজীবন অটুট থাকে। তাই বিয়ের মরশুমে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে মায়ের মন্দিরে ভিড় জমান।
শীতে সাইবেরিয়ান সহ বহু ভিনদেশী পাখির আনাগোনা শুরু হয় এই বাঁধটিতে। যা পাত্রাতুর সৌন্দর্য্যতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। পরিতৃপ্তি পেতে পারেন পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে নৌকাবিহার করেও। পাত্রাতু উপত্যকা বা খাঁড়িটি একটি সম্পূর্ণ পাহাড় কেটে তৈরী যা ওপর থেকে দেখলে রাস্তাটিকে জিলিপির ন্যায় মনে হতে পারে। এর ভুবনমোহিনী দৃশ্যের কাছে সিল্ক রুটও হার মানবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩০০ফুট উচুঁতে স্থিত এই নৈসর্গিক উপত্যকা অঞ্চল। চারিদিক গাঢ় সবুজে মোড়া পাহাড় ও তার বুক চিরে ওপরে ওঠা ঘোরানো রাস্তা ধরে ভিউ পয়েন্টে এসে পৌঁছলেই কেল্লা ফতে। পাহাড়ের সাথে মেঘেদের আলাপচারিতা ও তার দৃশ্য কোনোভাবেই ভাষায় প্রকাশ্য নয়।
Discussion about this post