দুর্গা পুজোর ছুটিতে ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি সমুদ্রের ধারে কয়েকটা দিন কাটাতে চাইলে তালিকায় রাখতে পারেন ওড়িশার এক অজানা, অথচ অপূর্ব সুন্দর সৈকত – পরিখী। বুড়িবালাম নদীর কাছাকাছি অবস্থিত এই নির্জন বালুকাবেলা যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। বালেশ্বর বা বালাসোর শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে এই সৈকতে পৌঁছে প্রথমেই চোখে পড়বে অক্ষত ঝাউবন, যা এখনও মানুষের কুড়ুল কিংবা করাতের আঘাত পায়নি। সকালের কোমল রোদে সোনালি বালির ওপর নির্ভয়ে ছুটে বেড়ায় লাল কাঁকড়ার দল, আর তীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকে ঝিনুক ও ভেসে আসা শঙ্খ। এখানে ভিড় নেই, ঝিনুকের দোকান নেই, শহুরে খাবারের গন্ধ নেই – শুধু আছে ঢেউয়ের শব্দ, হিমেল হাওয়া আর প্রকৃতির নির্জনতা। আঁধার নামলে সাগরের বুক জুড়ে দূরে দূরে জ্বলতে থাকা ট্রলারের আলো দেখে সময় কেটে যাবে অজান্তেই। পুজোর মৌসুমে যখন দিঘা, পুরী, মন্দারমণি পর্যটকে ঠাসা, তখন এই নিরালা সৈকতে পাবেন ভিড়মুক্ত শান্তি।

থাকার জন্য পরিখীর কাছে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবেশবান্ধব ক্যাম্প, যেখানে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন কটেজ থেকে শুরু করে তাঁবুতেও থাকার সুযোগ আছে। সমুদ্রের একেবারে ধারে বসেই খাওয়া যায় টাটকা মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি – সবই স্থানীয়ভাবে ধরা। তাঁবুতে মাথাপিছু থাকা ও খাওয়ার খরচ প্রায় ১৩০০ টাকা, আর ঘরে থাকলে ১৭০০ টাকা। খরচের মধ্যে দুপুরের খাবার, সন্ধ্যা ও রাতের খাবার এবং প্রাতরাশ অন্তর্ভুক্ত। মরসুম ও ক্যাম্পভেদে খরচ কিছুটা ওঠানামা করতে পারে। বুড়িবালাম নদীতে নৌকাবিহারেরও সুযোগ রয়েছে। নৌকাবিহারের জন্য মাথাপিছু খরচ গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা। নৌকায় চেপে নদীর প্রশস্ত জলরাশির ওপর দিয়ে খাঁড়িপথে ঢুকে দেখা মেলে বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বন আর আকাশে উড়ে বেড়ানো সিগাল পাখির।

শীত থেকে বসন্ত – এই সময় ওড়িশার সমুদ্রতট ভ্রমণের আদর্শ মরসুম। এই সময় আবহাওয়া থাকে আরামদায়ক, রোদ নরম আর হাওয়ায় থাকে ঠান্ডা আমেজ। গ্রীষ্ম বা বর্ষায়ও এখানে যাওয়া যায়, তবে গরমে দুপুরের সময় সূর্যের প্রখরতা বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে। যদিও ঝাউয়ের ছায়া আর সমুদ্রের বাতাস সেই কষ্টে কিছুটা প্রলেপ দেয়। বর্ষাকালে আকাশ ও সাগরের রঙের মেলবন্ধনও এক আলাদা সৌন্দর্য্য এনে দেয় এই সৈকতে।

পরিখীতে পৌঁছানো খুবই সহজ। হাওড়া বা সাঁতরাগাছি থেকে বালেশ্বরগামী ট্রেনে উঠলেই হবে, সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। কলকাতা থেকে বাসেও সরাসরি বালেশ্বর পৌঁছানো যায়। সড়কপথে বালেশ্বর দেশের প্রায় সব বড় শহরের সঙ্গে যুক্ত, কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার, তাই নিজস্ব গাড়িতেও যাওয়া সম্ভব। সড়ক বা রেলপথ – যেভাবেই যান না কেন, একবার পৌঁছে গেলে পরিখীর নির্জনতা, সমুদ্রের স্নিগ্ধতা আর ঝাউবনের নীরবতা আপনাকে এমনভাবে মুগ্ধ করবে যে শহুরে কোলাহলে আর ফিরে যেতে মন চাইবে না।
চিত্র ঋণ – শুভ্রা বাড়ুই, ক্যাম্প উইথ কেয়ারের ফেসবুক পেজ
Discussion about this post